রাঙামাটির প্রথম গণশুনানিতে জেলাপ্রশাসক> জনগণের জন্য বিড়ম্বনাহীন সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য

613

 

OLYMPUS DIGITAL CAMERA
OLYMPUS DIGITAL CAMERA

॥ মোঃ হান্নান ॥ রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেছেন, জনগণের জন্য বিড়ম্বনাহীন সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। কোনো নাগরিক যেন তার ন্যায্য সেবা থেকে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয় এবং সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানী থেকে মুক্তি পেতে পারে সে লক্ষ্যেই এই গণশুনানীর আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে জেলা প্রশাসক এ কথা বলেন। তিনি জানান, এখন থেকে প্রতি বুধবার রাঙামাটি জেলাপ্রমাসক কার্যালয়ে সেবাপ্রার্থীদের গণশুনানী অনুষ্ঠিত হবে।

রাঙামাটি জেলা পর্যায়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই গণশুনানীতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নাগরিকগণ ছাড়াও রাঙামাটি পৌরসভা থেকে বেশ কয়েকজন সেবাপ্রার্থী উৎসাহের সাথে অংশ নিয়ে তাদের অসুবিধা ও অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। সেবা প্রত্যাশী নাগরিকদের সরকারী সেবা সর্ম্পকিত অভাব অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে বুধবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান নিজেই গণশুনানীতে অংশ গ্রহণ করেন। এসময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু শাহেদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোয়াজ্জম হোসাইনসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দ ও  সেবা প্রত্যাশীগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রথমদিনের এই শুনানীতে মোট ১৯ জন সেবা প্রত্যাশী তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা গণশুনানীতে ভূমি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক দূর্ঘটনা, হেডম্যান-কার্বারীদের বিষয়ে জটিলতা, খাজনা সংক্রান্ত সমস্যা, অবৈধ দখলসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এসময় জেলা প্রশাসক প্রত্যেক অভিযোগ কারীর বিষয়ে তাৎক্ষণিক জাবাব দেন। এর মধ্যে কয়েকজনের সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবেই সমাধান দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের পক্ষ হতে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান মহসিন জানান, ভূমি অফিসে কানুনগো সংকটের কারণে কাজকর্মে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অন্যদিকে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত হারে পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে। আবার এসব পরীক্ষার ফি হতে সরকারী বেতনের বাইরে গিয়েও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সম্মানী নিচ্ছে, যা কখনোই কাম্য নয়। পৌর পার্ক এখন সময়ের দাবি। সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ভূমি সংক্রান্ত কাজে মানুষ সবচেয়ে বেশি হয়রানি হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবাও তেমন একটা মানসম্মত নয়। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দৈনিক রাঙামাটি সম্পাদক আনোয়ার আল হক বলেন, শুধু ভুক্তভোগী, সুশীল সমাজদের নিয়ে গণশুনানী করলে হবে না। যে সমস্ত অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়, সে সমস্ত অফিস প্রধানদেরও গণশুনাণীতে উপস্থিত করতে পারলে ভালো হয়। গণশুনানীতে আরো বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখওয়াৎ হোসেন রুবেল, সাবেক সভাপতি সুনীল কান্তি দে, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ডাঃ একে দেওয়ান, রাঙামাটি সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ ড. আলো রাণী আইচ, জেলা রোভার স্কাউটস কমিশনার নুরুল আবছার ও হেডম্যান সুইচা প্রু চৌধুরী প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান সেবা প্রত্যাশীদের আনীত অভিযোগ তাঁর অধীন স্ব-স্ব কর্মকর্তার মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, সকলের সমন্বয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে অভিযোগের বিষয়ে তিনি ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিয়মনীতির বাইরে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শহরে জুয়া ও মাদক সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, রাঙামাটিতে মদ ও জুয়ার আসর কখনও কাম্য নয়। মাদকমুক্ত রাঙামাটি শহরের জন্য যা যা প্রয়োজন সবটাই করা হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসনের কাছে সেবা চাইতে এসে দালালদের খপ্পড়ে পড়বেন না। জনগণের জন্যই প্রশাসন। সেবা নিতে সরাসরি আসবেন, সেবা আপনি পাবেন।  জনগণের জন্য বিড়ম্বনাহীন সেবা নিশ্চিত করায় আমাদের লক্ষ্য। এছাড়া তিনি গণশুনানিতে প্রাপ্ত আবেদনের বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম সেবাপ্রত্যাশীদের মোবাইল ও ই-মেইল এর মাধ্যমে অবহিত করা হবে বলে জানান।

গণশুনানী কার্যক্রম প্রতি সপ্তাহের বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। কোনো বুধবার সরকারি ছুটি থাকলে পরবর্তী কার্য দিবসে তা অনুষ্ঠিত হবে। গণশুনানির জন্য অভিযোগ লিখিত আকারে বা জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজ এ অথবা ইমেইলের মাধ্যমে দাখিল করা যাবে।