রাঙামাটির ১২ খাদ্য গুদামের ঠিকাদারী সমঝোতায় উচ্চ দরে ভাগাভগির অভিযোগ

352

॥ আলমগীর মানিক ॥

নিয়ম নীতি পাশ কাটিয়ে রাঙামাটির ১২টি এলএসডির (স্থানীয় খাদ্যগুদামের) শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদারী সমঝোতায় ভাগাভাগি করে নেওয়ার অবিযোগ উঠেছে। এই সমঝোতার ফলে সরকারি বিপুল পরিমান রাজস্ব হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সমঝোতার কারণে গত অর্থ বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ দরে কাজ দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার (১২জুন) দরপত্র জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের এক কর্মকর্তার তত্বাবধায়নে রাঙামাটি জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষয়টি সমঝোতা করে দেন এবং অপেক্ষাকৃত বেশি দরে কাজটি পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দেন, এতে পিুল পরিমাণ সরকারি রাজস্বের অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সোমবার রাঙামাটি শহরের বনরূপাস্থ হোটেল হীলটপের একটি কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের মাধ্যম সমঝোতায় উপনীত হয়ে জড়িতরা। প্রতিযোগীতা না থাকায় সংঘবব্ধ এই সিন্ডিকেটক উচ্চ মূল্য ১২টি এলএসডির শ্রম ও হস্তার্পন কাজ নিজেদের নামে করে নেয়। অভিযোগ উঠেছে, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শ্রম নিয়ন্ত্রণ কাজের জন্য আহুত এই টেন্ডারে অন্তত সাড়ে পাঁচশত দরপত্র সিডিউল বিক্রি হলেও সমঝোতার কারণে সিডিউল বিক্রির বিষিয়টিও নয়ছয় করা হয়েছে।

দরপত্রের বিষয়ে রাঙামাটির জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি এলএসডিতে প্রতিটিতে একজন করে শ্রম ও হস্তার্পণ (লেবার হ্যান্ডেলিং) ঠিকাদার নিয়োগের জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান-ঠিকাদারের নিকট হতে দরপত্র আহবান করা হয়। এই দরপত্রের মাধ্যমে রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই, বড়ইছড়ি, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, দুরছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, লংগদু ও বাঘাইছড়ি এলএসডির খাদ্য-শস্য, খাদ্য দ্রব্য, খালী বস্তা, যে কোনো মালামাল সামগ্রী শ্রম ও হস্তার্পণ কাজ বাস্তবায়নের কার্যাদেশ প্রদান করা হবে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুযায়ি প্রতিযোগিতা মূলক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনি¤œ দরের দরদাতাকে কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এখানে হয়েছে সম্পূর্ণ তার উল্টো। ঠিকাদারেরা দরপত্র ক্রয় করলেও তা ড্রপিংয়ের (দরপত্র জমা দেওয়ার) সুযোগ দেওয়া হয়নি। সমঝোতার মাধ্যমে গেল বারের ৪৪ টাকা ৫০ পয়সার কাজ এবার ১১৮ টাকা সর্বনি¤œ দর দেখিয়ে টেন্ডার ওপেনিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রাঙামাটি খাদ্য বিভাগের ১২ এলএসডির শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগে সমঝোতার বিষয়টি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) মহোদয় জেনে গেছেন। ইতিমধ্যে স্যার (আরসিফুড) টেন্ডার বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু রাঙামাটি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) কানিজ জাহান বিন্দু টেন্ডার বাতিল করেননি। এমনকি টেন্ডার বাতিল না করলে রি-টেন্ডার দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাতেও তিনি আমতা-আমতা করছেন। বিষয়টি কোন দিকে গড়াচ্ছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।

জেলার একাধিক খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার জানান, শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদারের কোনো কাজ নেই। মূলত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের একটি সিন্ডিকেট প্রতি দুই বছর অন্তর কাগজে কলমে শ্রম ও হস্তার্র্পণ ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েই সরকারি কোষাগারের টাকা পকেটস্ত করা হচ্ছে। আর এদিকে খাদ্য গুদামে নিয়োজিত শ্রমিকরা (কুলিরা) পারিশ্রমিক হিসেবে পরিবহন ঠিকাদারদের কাছ থেকে ট্রাকপতি এক হাজার টাকা করে আদায় করে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাঙামাটি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কানিজ জাহান বিন্দু গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর গরম হয়ে যান। তিনি দায়সারা জবাব দিয়ে বলেন, নিয়মনীতি মেনেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।