॥ আলমগীর মান্কি ॥
অবশেষে নানা জল্পনা কল্পনার পর পার্বত্য তিনটি জেলা পরিষদ পুণগঠন করেছে সরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচিত পরিষদের মাধ্যমে পরিচালনার আইন থাকলেও পার্বত্য চুক্তির পর থেকেই জেলা পরিষদগুলোতে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকারগুলো। যার ধারাবাহিকতায় এবারও পুর্নঃগঠন করা হচ্ছে।
পার্বত্য বান্দরবানের বর্তমান চেয়ারম্যানকে বহাল রাখলেও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের বর্তমান দুই চেয়ারম্যানকে সরিয়ে নতুন দু’জনকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়েছে বলে পার্বত্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে। সূত্রমতে এই বিষয়ে ১০ই ডিসেম্বর সরকারী ঘোষণা দেওয়া হবে।
পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে বৃষকেতু চাকমার পরিবর্তে নিয়োগ দেওয়া হলো অং সুই প্র“ চৌধুরীকে, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে মংশৈ প্র“ চৌধুরী অপু ও বান্দরবানের বর্তমান চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হচ্ছে নতুন পুর্নঃগঠিত পরিষদে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে পরিষদ পূনঃর্গঠনের জন্য সূপারিশ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় আর এই তালিকার পরে পার্বত্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠালে প্রধানমন্ত্রী গত ৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার অনুমোদন প্রদান করেন, আর আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
তিন জেলা পরিষদের ৪৫টি পদের মধ্যে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য থোয়াই হ্লা মং ও মোস্তফা জামাল জেলার থানচি ও লামা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কারনে অন্যদিকে রাঙামাটিতে চান মনি তংচঙ্গ্যা, জানে আলম ২ জনের মৃত্যু জনিত কারন, অন্য ১ সদস্যকে বাদ দেওয়াসহ মোট ৫টিসহ আরো কয়েকটি পদে নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়ে পূর্নঃগঠন হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ।
প্রসঙ্গতঃ পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রথম ও শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন। এরপর আর নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির আইনে বলা আছে, পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে প্রণীত পৃথক ভোটার তালিকায় ৩ পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ১ জন চেয়ারম্যান এবং ৩৩ জন সদস্য নির্বাচিত হবে।
প্রত্যেক পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জনগণের ভোটে উপজাতিদের মধ্য থেকে ১ জন চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্য, অ-উপজাতি ১০ জন এবং সংরক্ষিত তিনটি মহিলা আসনে ২ জন উপজাতি ও ১ জন অ-উপজাতি সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ায় পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোত জনগণের অংশগ্রহন নিশ্চিত হয়নি। ১৯৯৬ সালের ৫ আগস্ট নির্বাচিত তিনটি পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রত্যেক পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য মনোনয়ন দিয়ে অর্র্ন্তবতীকালীন পরিষদ গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্তে ১৯৯৮ সালে আইন সংশোধন করে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ থেকে ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ নামে সংশোধিত হয়।
এরপর আর নির্বাচন দেয়নি সরকার। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ১ জন চেয়ারম্যানসহ সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ১৫-তে উন্নীত করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করে সরকার।