॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
রাঙামাটি রাজবন বিহারে দু’দিনব্যাপী শুরু হওয়া ৪৩তম কঠিন চীবর দানোৎসব চিবর দানের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছে ।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায় রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে এ চিবর দান করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতব্যাপী তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ এবং ২৪ঘন্টার মধ্যে এ বেইন (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র ) বুনন করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে পূণার্থীদের উদ্দেশ্য পঞ্চশীল পাঠ করেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়।
চিবরদানে বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন, রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
চিবরদান অনুষ্ঠানে রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুড়া।
বিশেষ অথিথির বক্তব্য রাখেন,জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সচিব তরুণ কান্তি ঘোষ।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় ফিতা কেটে চরকায় সুতাকাটা বেইন বুনন উদ্বোধন করেছিলেন, চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রশিদ জানান, এ কঠিন চিবর দানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোর করা হয়েছিলো। কোনরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়া শুক্রবারে বৌদ্ধ ধর্মীয় এ কঠিন চিবর দানোৎসব শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে।
রাঙামাটি রাজবন বিহারে এ মহাদানযজ্ঞ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। তার আগেও ১৯৭৪ সালে শ্রাবকবুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পুনঃ প্রবর্তন করেন। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ পার্বত্য তিন জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।