॥ বিশেষ প্রতিবেদক ॥
কোন জড়তা নেই, ভয় নেই, ভীতি নেই, নমনীয়তা নেই। বক্তব্য দিতে এসেই অগ্নিমুর্তি ধারণ করলেন রূপ কুমার চাকমা। বুকের ভেতর বছরের পর বছর সুপ্ত থাকা আগ্নেয়গিরি হঠাৎ যেন ফুঁসে উঠল প্রতিবাদি মানুষের ঢল দেখে। হাজার হাজার জনতা এদিন দেখল একজন রুপ কুমারের অগ্নির্মুর্তি। তারা বাবা কিনা মোহন চাকমাকে সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে দেহকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেরত দিয়েছিল। তার মা ও বোনকে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করে আদায় করেছিল। তার উপর চালিয়েছিল অকথ্য নির্যাতন। সেই রুপ কুমার চাকমাই বক্তব্য দিতে এসে উত্তপ্ত করে দিয়েছিল সমাবেশ স্থল। রুপ কুমার বক্তব্যে বলেছিলেন, বাবাকে হত্যা করা হয়, মা বোনকে অপহরণ করা হয়, আমার ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। তিনি সরাসরি এসব ঘটনার জন্য সন্তু লারমাকে দায়ি করে বিচার দাবি করেন। তিনি বজ্রকন্ঠে প্রশ্ন রাখেন, শান্তি চুক্তির পরও পাহাড়ি সন্ত্রাসী দলগুলোর কাছে অস্ত্র কেন? কেন সমানতালে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম হচ্ছে? এসব সন্ত্রাসীরা অস্ত্র দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের সাধারণ নিরিহ জনগণকে জিম্মি করে রেখে, সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাচ্ছে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমাদেরকে লাইসে¯œধারী অস্ত্র দিন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, এবার যুদ্ধ হবে সন্ত্রাসী, খুনি ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিব। আমি সব হারিয়েছি, পাওয়ার আশা কিছুই করি না।
নির্ধারিত সময়ে রুপ কুমার বক্তব্য শেষ করতে চাইলে উপস্থিত জনতা বাঁধা দিয়ে বক্তব্য চালিয়ে যেতে বললে, রুপ কুমার চাকমা বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষ এখন ক্ষুধার্ত বাঘের মতন ঘাপটি মেরে বসে আছে। তিনি প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ইউনিয়নে এসব চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তোলার আহবান জানান। তিনি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, অস্ত্রের ঝনঝনানি শুধু সাধারণ জনগণের ওপর দেখাতে পারেন, সাহস থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সে সাহসের নমুনা দেখান। তিনি মানবাধিকার কমিশনকে পক্ষপাত দুষ্টু অভিহিত করে বলেন, যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হল, মা-বোনকে অপহরণ করা হল, আমার ওপর নির্যাতন নেমে আসল তখন আপনাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশে যদি সালাউদ্দিন কাদেরদের মত বাঘা বাঘা রাজাকারদের সরকার বিচার করতে পারে, তাহলে পার্বত্যাঞ্চলের এসব সন্ত্রাসীদের কেন সরকার বিচার করতে পারবে না।