শান্তিচুক্তির ফল হিসেবেই পার্বত্য এলাকার আনাচে কানাচে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে: দীপংকর এমপি

384

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দিপংকর তালুকদার এমপিকে সম্মিলিত পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাঙামাটি চেম্বার্স অব কমার্সের সম্মেলন কক্ষে এই সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।

রাঙামাটি চেম্বার্স অব কমার্সের সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র মোঃ আকবর হোসেন চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য অংসুছাইন চৌধুরী, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি একেএম মকছুদ আহমদ, রাঙামাটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম মুন্না, আসবাবপত্র সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন পিয়ারু প্রমূখ।
সংবর্ধিত অতিথি দিপংকর তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য একটি অনন্য অর্জন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাহাড়ের সমস্যা রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়। আর চুক্তির পরবর্তীতে পার্বত্য এলাকায় প্রতিটি আনাচে কানাচে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। যার সুফল এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায় ভোগ করছেন।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দরা সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করেছেন সাধারণ জনগণের পক্ষে, কোন নির্দিষ্ট জাতি-গোষ্ঠীর পক্ষে চুক্তি করেননি। শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সকল সম্প্রদায়ের জন্য কিন্তু পাহাড়ী-বাঙালীসহ সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা বিশ^াস আনতে ব্যর্থ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব রয়েছে। নানা ইস্যুতে জেএসএস’র অসহযোগিতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতিতে রূপ নিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করে এমপি আরো বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক অবনতি ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের একের পর এক হত্যা করে, পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি জেএসএস’র নেতাকর্মীদেও পাহাড়ে শান্তির লক্ষে আওয়ামীলীগ সরকার ও সকল প্রশাসনের বিরুদ্ধে গালমন্দ পরিহার ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের আহব্বান জানান।

দিপংকর তালুকদার এমপি ইতিহাস তুলে ধরে আরো বলেন, ১৯৭২/৭৩ সালে ছাত্রলীগের কাউন্সিলের পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছিলো পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধান রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করতে হবে। এর পর ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগ গঠন হলো। আর আজকে যারা শান্তিচুক্তির এটা হয় নাই, ওটা হয় নাই, তারা রাতারাতি চুক্তি বাস্তবায়ন চান। যখানে আমরা ১৯৭২/৭৩ সালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পোষ্টার করা হয়েছিলো ঘোষণা এসেছিলো। সেটা আমরা আওয়ামীলীগের দাবীতে নিয়ে আসলাম ১৯৮৬ সালে। আর ১৯৮৬ সালে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই জেলা আওয়ামীলীগে। আর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭ দফা দাবীর মধ্যে একটা দাবী ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের। আমি যতক্ষণ থাকি রাঙামাটিতে ততক্ষণ এই দাবী নিয়ে আলোচনা হয়। আমি চলে গেলে আর কেউ মুখ খুলে না। কারণ তখন এরশাদ সরকার। এরশাদ কোন ধরনের এই পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে বলে বিশ্বাস করে না। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ঘোষণা দিলেন যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধান রাজনৈতিক ভাবে করতে হবে। তখন এই বিএনপি, জাতীয় পার্টি এরা সকলেই আমাদের জননেত্রীকে আসামীর কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী, তার বিচার হোক। আর ১৯৮৬ সালের পরে ১৯৮৮ সালে এসে এরশাদ আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রদর্শিত পথে হাঁটতে চায়, হাঁটার পরে তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য শান্তিবাহিনীর সঙ্গে জনসংহতি সমিতির সাথে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু সমস্যা সমাধান করতে পারেই নাই। ১৯৮৯ সালে তিনি জেলা পরিষদের অবকাঠামো তৈরী করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি যে আমাদের নেত্রীকে আসামীর কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়ে ছিলো রাষ্ট্রদ্রোহিতায় মামলায় অভিযোগ এনেছিলেন তার বিরুদ্ধে। তারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পথ দেখিয়েছিলো সেই পথেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলো রাজনৈতিক ভাবে। কিন্তু বিএনপিও পারে নাই। কেন পারে নাই, কারণ তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ছিলোনা তাদের রাজনৈতিক বিক্ষণ ছিলো না, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিলো না এবং সবচেয়ে যেটা ছিলো সেটা হলো আন্তরিকতা ছিলো না। আমি এইসব কথাগুলো বলছি যে কারণে তা হলো যারা কুয়া করার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে এইসব কথা বলা।

তিনি আরো বলেন, জনসংহতি সমিতি আওয়ামীলীগকে কখনোই সমর্থন করেনি। কারণ ১৯৯১ সালে তারা চেঙ্গীস খানকে সমর্থন করেছিলো। এসময় আওয়ামীলীগের ২/৩জন মানুষ তারাও চেঙ্গীস খানকে ভোট দিতে বলেছিলো। তারা বলেছিলো সে জিতবে না। জনসংহতি সমিতি যারা সমর্থন করে তারাই জিতবে। আর জনসংহতি সমিতি সমর্থন করেছিলো চেঙ্গীস খানকে হাত ঘড়ি মার্কা নিয়ে। তখন আমদের কিছুই ছিলো না। আর ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করলো জনসংহতি সমিতি প্রজাপতি মার্কায় সমর্থন দিলো বিজয় কেতন চাকমাকে। তাহলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জনসংহতি সমিতি আওয়ামীলীগকে সমর্থন করে নাই। বরং তারা চাইছিলো আওয়ামীলীগ নিশ্চিত হয়ে যাক। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শীতা, প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতার কারণে পাহাড়ে শান্তি আনয়নে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করা হয়। সভায় আলোচকবৃন্দ শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে সুবাতাস ফিরিয়ে আনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সভা শেষে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অনন্য ভূমিকা রাখায় খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি সংসদ সদস্য দিপংকর তালুকদার এমপিকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।