মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ২ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : জুম্ম জাতির দাবি না মানলে পাহাড়ে আবারো আগুন জ্বলবে বলে হুশিঁয়ারী উচ্চারণ করেছেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছরেও পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদানকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মন্ত্রীরা সরকারের দালালী করে বলেন, পার্বত্য চুক্তির নাকি ৯৮ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় পার্বত্য চুক্তির ৭৮ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার জুম্ম জাতির অধিকার, স্বাধীনতা, স্বকীয় বৈশিষ্ট, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ বিলীন করে দিয়েছে। আদিবাসীদের আজ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বলা হচ্ছে এবং সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে জুম্ম জনগণকে আবারো বাঙালী বানানো হচ্ছে।
শান্তিচুক্তির ১৮তম বর্ষপূর্তিতে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে বুধবার অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য পাব্যত্য চট্টগ্রাম সংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ১৯৭২ সালের সাংবিধানিকভাবে জুম্ম জনগণকে বাঙালি বানানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আমাদের নেতা মানবেন্দ্র লারমা সে সময়ের সংবিধান মেনে নেয়নি। আজকেও শেখ মুজিব কন্যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জুম্ম জনগোষ্ঠিকে বাঙালি মুসলমান বানিয়ে জুম্ম জাতি সত্ত্বাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকার বলে বেড়ায় চুক্তি সম্পাদান হচ্ছে অথচ এ অঞ্চলে সামরিক শাসন অব্যহত রয়েছে। এ অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসকরা তাদের ন্যাস্ত বাহিনী দিয়ে সেই ১৯০০ সালের আইনের ধারা দিয়ে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। একদিকে আমাদের যেমন বাঙালি মুসলমান বানানোর চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে চলছে সামরিক শাসন। ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে জুম্ম জাতিকে দিনদিন ধ্বংস করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এসময় আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। বিশেষ অথিতির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ রাহমান নাসির উদ্দিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান প্রমুখ।
সন্তু আরো বলেন, পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার আগে আদিবাসীদের সাথে কথা বলতে হবে। আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া এ অঞ্চলে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা এ অঞ্চলের মানুষ। আমরাই আমাদের অঞ্চলকে শাসন করবো। কারো হস্তক্ষেপ আর মানা হবে না।
সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নতুন বছরের পহেলা জানুয়ারী থেকে এই ১০ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন চলবে। কর্মসুচিগুলো হলো: চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য হরতাল অব্যহত থাকবে, টানা অবরোধ চলবে, অর্থনৈতিক অবরোধ থাকবে, পর্যটন শিল্প বন্ধ করে দেওয়া হবে, সরকারি আধাসরকারি, বেসরকারি অফিসের কর্মপরিচালনা বন্ধ রাখা হবে, আদালত বর্জন করে জুম্ম জনগণের জন্য আলাদা আদালত তৈরি করা হবে, ছাত্র সমাজের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যহত থাকবে, জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ করা হবে, ভূমি বিরোধ চক্রান্ত কঠিন ভাবে মোকাবেলা করা হবে এবং জুম্ম দালালদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।
সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান