শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠায় রাঙামাটিতে এনসিটিএফ’র স্মারকলিপি প্রদান

93

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত নির্দেশ প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে প্রদানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ন্যাশনাল চিলড্রেন্স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ), রাঙামাটি জেলা শাখা।

বুধবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেয় এনসিটিএফ সদস্যরা।

এসময় এনসিটিএফ রাঙামাটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ন্তি ত্রিপুরা, শিশু গবেষক সিয়াম হোসেন, চাইল্ড পার্লামেন্ট মেম্বার ন¤্রতা রায়, জেলা ভলান্টিয়ার মো. ইকবাল হোসেন ও জয়ন্তি ত্রিপুরা, ইয়েস বিডি মেম্বার গোলাম মোস্তফা প্রমূখ।

স্মারকলিপিতে উল্লেক করা হয়- এনসিটিএফ জাতীয় পর্যায়ের একটি শিশু সংগঠন যা শিশুদের অংশগ্রহণে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আমাদেরকে সহায়তা করে থাকে। ইতিপূর্বে আমরা আপনার নিকট শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেছি এবং আপনার সুচিন্তিত নির্দেশনা পেয়েছি। আজ আবারও আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

১৯৭২ সালের সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মহিলা ও শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে রাষ্ট্রকে কোনো কিছুই বিরত রাখতে পারবে না’। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও দায়বদ্ধতাকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) অনুস্বাক্ষর করেছে এবং শিশু অধিকারকে সম্মান প্রদর্শন করে শিশুদের মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা, আইন, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন সহ এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। এই বিশাল জনগোষ্ঠী বিভিন্ন মানের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে বেড়ে উঠছে, যার ফলে শিশুদের জীবন বহুমাত্রিক সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত। কোনো একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি দিয়ে অথবা একমুখী পরিকল্পনা দিয়ে শিশুদের জীবনের সকল সমস্যাকে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য পরিকল্পনা, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি, কার্যকর বাস্তবায়ন ও সকল ক্ষেত্রে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করার জন্য সর্বক্ষেত্রে সুসমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখানেই শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই নিবেদিত প্রাণ একটি পৃথক শিশু অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চলে আসে, যার মাধ্যম সুসংগঠিত ও সুসমন্বিত করা হবে শিশুদের জন্য রাষ্ট্রের সকল প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশে শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠা নাগরিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি। শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে শিশু বিষয়ক কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এ বিষয়ে নীতিগত ভাবে একমত হয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় পৃথক শিশু অধিদপ্তরের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।

কিন্তু ২০২০ এর পর এ বিষয়ে সরকারের আর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। মাননীয় মন্ত্রী, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও সম্প্রতি এ বিষয়ে সরকারের সহযোগী উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে আশ^স্ত করেছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমিকে পৃথক শিশু অধিদপ্তরের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পুর্ণ ভিন্ন হওয়ায় একটি কখনও আরেকটির বিকল্প হতে পারে না।

তাই শিশুদেরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিশু বিষয়ক সকল উন্নয়ন, পরিকল্পনা, আইন ও নীতিমালার কার্যকর ও সঠিক বাস্তবায়নে দ্রুততার সাথে একটি পৃথক শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার বিনীত অনুরোধ জানাই।