সাফ বিজয়ী পাহাড়ি কন্যাদের জীর্ণকুটিরে ডিসির শুভেচ্ছা উপহার

181

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

পাহাড়জুড়ে এখন ঋতুপর্ণা আর রূপনাদের জয়জয়কার, সবার মুখে ধন্য ধন্য রব, আর উপহারের সমাহার। পাহাড় বিজয়ী এই পাহাড়ি কন্যাদের আনন্দে উদ্বেল হয়ে খোদ তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। হাতে ফুল মিষ্টি আর নগদ টাকার উপহার। পরিবারের মানুষ আনন্দের আতিশয্যে বাকরুদ্ধ।

প্রথমবারের মতো সাফ চ্যম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় বাংলাদের নারী ফুটবল দর এখন দেশজুড়ে প্রসংশায় ভাসছেন। এর মধ্যে পাঁচ পাঁচজন খেলোয়াড় পাহাড়ি কিশোরি। তার মধ্যে দুজনের বাড়ি খোদ রাঙামাটিতে। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবল ট্যুর্ণামেন্টের ফাইনালে জয় ছিনেয়ে আনার পর রাঙামাটির রূপনা ঋতুপর্ণাদের নিয়ে যেন রূপকথার গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে পাহাড়ের নানা বয়সি নারী পুরুষ। এ জয় যেমন জাতির এ গর্ব তেমনি রাঙামাটিবাসীর।

মঙ্গলবার (২০শে সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজে স্বশরিরে উপস্থিত থেকে নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূইয়াঁদম ৫নং ওয়ার্ড এলাকার সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের গোলরক্ষক রূপনা চাকমার মায়ের হাতে ফুলের তোড়া, সম্মাননা উপহার ও নগদ দেড় লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। পরে জেলাপ্রশাসক কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকার নারী খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়িতে যান। সেখানেও জেলা প্রশাসক ঋতুপর্ণা চাকমার পরিবারের হাতে সম্মাননা উপহার ও নগদ ১লক্ষ টাকা তুলে দেন।

এসময় জেলাপ্রশাসক উভয় খেলোয়াড়ের বসতবাড়ি ঘুরে দেখেন এবং একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়াও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে রূপনা চাকমার বাড়ি যাওয়ার পথে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এ সময় এলাকার নারী পুরুষ খেলোয়াড়দের বাড়িতে ভীড় জমায়। পাহাড় জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন পাহাড়ি রাজকণ্যার দল। এবার বিশ্ব দরবারে নিজেদেরকে আরো একবার চিনিয়ে দিলো ঋতুপর্ণা আর রূপনারা। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছেন এই রাজকণ্যার দল। পাহাড় থেকে পাহাড়ে এখন শুধু তাদের জয়জয়কার। উচ্ছ্বাসিত পুরো পাহাড়ের নিরন্তর ফুটবল প্রেমি মানুষ। সম্প্রীতির বন্ধন যেন আরো দৃঢ় হয়েছে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের।

পাহাড়ের মানুষ; পাহাড়ের প্রকৃতি এখন উন্মুখ হয়ে আছে বিজয়ীনিদের প্রতীক্ষায়। যেন ঘাসগুলোও তাদেরকে খুব মিস করছে। বিশ্বদরবারে এই সাফল্য যে তারও কিছু অবদান রয়েছে। কখনো ঘাসে আবার কখনো কর্দমাক্ত হৃদয়ে তাদেরকে শিখিয়েছে কিভাবে রুখে দাঁড়াতে হয় শত্রু বিপক্ষে।

ঋতুপর্ণার ঘর ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ির অদূরে। কখনো নিজে কখনো নিজের প্রিয় কোচের সাথে অনুশীলন করতে এসেছিলেনৎ ঋতুপর্ণা চাকমা। গল্পটি শুনতে মনে আনন্দ লাগবে সবার, হৃদয়ে গেঁথে যাবে বাস্তবের সাথে লড়াই করে ঠিকে থাকা ঋতুপর্ণার ইতিহাস। মাত্র দুইমাস আগে তার একমাত্র ছোটভাইকে হারাতে হয়েছে। হৃদয়ের এই ক্ষত যেন তাকে কোনোভাবে কাবু করতে পারেনি দূর্বার চলার গতিকে।

খেলোয়াড়দের পরিবারে ডিসির এই আগমন সময়ে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এনডিসি) হাসান মোহাম্মদ শোয়াইব, নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলুর রহমান, রাঙামাটি সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নিরুপা দেওয়ান ও জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার প্রাপ্ত খেলোয়াড় বরুন বিকাশ দেওয়ান প্রমূখ।

রুপনা চাকমা ভাই শান্তি জীবন চাকমা জানান, আমার বোন ছোটবেলা থেকেই ফুটবল প্রেমী। অত্যন্ত ভাল খেলতেন ফুটবল। গতকাল টেলিভিশন না থাকায় নিজের বোনের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলাটাও দেখতে না পারায় অনেক দুখঃ পেয়েছেন বলেও জানায় এশিয়ার সেরা ফুটবল গোলরক্ষক রুপনা চাকমার এই ভাই। রুপনা চাকমা ভূইয়াঁদম এলাকার মৃত গাছামনি চাকমার সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে।