॥ আনোয়ার আল হক ॥ রাঙামাটি জেলার অন্যতম একটি প্রধান সড়ক হলো জিসিবি রোড। জেলা সদরের সাথে তিনটি উপজেলার যোগাযোগ ছাড়াও এই সড়কটিই বান্দরবান জেলার সাথে রাঙামাটির একমাত্র সড়ক যোগাযোগ পথ। জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সড়কের যেমন অবদান রয়েছে তেমনি বর্তামনে কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা ও রাজস্থলীর অনেক শিক্ষার্থীরাও এখন এই সড়ক দিয়ে রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যলয় কলেজে প্রতিদিন বাড়ি থেকে এসে ক্লাস করেন। রাঙামাটি থেকেও শিক্ষার্থীরা কর্ণফুলি ও সুইডিস টেকনিকেল কলেজে যায়। এই সড়কটিতেই ঘগড়ার অদূরে একটি বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে প্রায় তিনমাস আগে। কিন্তু বিভাগীয় সমন্বয় ও ফাইল জটিলতায় সেতুটি মেরামত করছে না কোনো কর্তৃপক্ষ। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক লক্ষ মানুষ। প্রায় তিনমাস এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সরকারি সংশ্লিষ্ট মহল যেন জনভোগান্তির বিষয়টি বুঝতেই পারছেন না। সড়ক বিভাগ বলছে এটা ইসিবির দায়িত্ব আর ইসিবি বলছে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সদর দপ্তর বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানার পরও লালফিতায় বন্দী করে রেখেছে সড়ক সংস্কারের কাজ। দীর্ঘ তিন মাস সড়কটি অচল থাকার প্রেক্ষাপটে গত ১০ জুন জেলা আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় সুধীজনেরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাতেই দুই বিভাগের ঠেলাঠেলির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। আইন শৃঙ্খলা সভার অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা এ বিষয়ে মত প্রকাশ করে বলেছেন, মূলত ইসিবির সাথে সড়ক বিভাগের যে ¯œায়ুযুদ্ধ এই সুযোগে তা মিটিয়ে ফেলার জন্যই সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না। তাদের মতে সড়ক বিভাগ মনে করছে জনগণকে দুর্ভোগে রেখে রাঙামাটির সড়ক সংস্কারের বিষয় তাদের কব্জায় নিয়ে আসা সহজ হবে। পক্ষান্তরে ইসিবিও হয়তো এমন মনভাব পোষণ করায় কেউ এগিয়ে আসছে না।
আইন শৃঙ্খলা সভায় সড়ক বিভাগের প্রতিনিধি জানান, মূলত রাঙামাটি জেলায় শহরের ১০ কিমি: কাউখালী সংযোগ সড়ক ও বিএনএল সড়ক ছাড়া বাকি সড়কসমূহ ইসিবির হাতে ন্যাস্ত। তাই তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনট্রাকশন ব্যাটালিয়ন-১৯ (ইসিবি) এর কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল মোঃ তানভির হোসেন দৈনিক রাঙামটিকে জানান, গত ১৪ এপ্রিল ব্রীজটি ভাঙ্গার পরপরই আমরা সেখানে গিয়ে বিষয়টি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কাছে অতিরিক্ত কোনো তহবিল নেই। তাই আমরা কিছু করতে পারছি না। তিনি জানান, ব্রীজটিতে একটি ওভার লোডেড গাড়ি ওঠার কারণে বেইলী ব্রীজটি এমনভাবে ভেঙ্গে গেছে যে, তা আর মেরামতের উপযোগী নেই। তার মতে ্কই স্থানে অন্য একটি বেইলী ব্রীজ স্থাপন করতে হবে। সেটা সড়ক বিভাগ চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করতে পারে, কারণ তাদের কাছে এধরণের বেইলী ব্রীজ স্টোরেই জমা আছে। কর্ণেল তানভির এও জানান যে, আমরা এই মতামতগুলো লিখিতভাবে সওজ বিভাগে সাথে সাথেই জানিয়েছি। তার সরবরাহ করা পত্র (২৩.০১…১৫.০৪.১৬/১৪ তাং ১৫ এপ্রিল) থেকে জানা যায়। এই পত্রটির কপি যোগযোগ মন্ত্রণালয় এবং সওজ এর প্রধান প্রকৌশলী বরাবরেও পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান যে, রাঙামাটি জেলার কিছু সড়ক মেরামত ও পূণ: নির্মাণের দায়িত্ব তাদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন কোনো ব্রীজ বা নতুন সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব বা মেইটেইন্যান্সখাতে তাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তাছাড়া তাদের উপর ন্যাস্ত করা প্রকল্প ২০১৫ সালের জুন মাসেই শেষ হয়ে গিয়েছে এ বিষয়ে তারা (কমপ্লিটেশন রিপোর্ট) পিসিআরও জমা দিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে।
এ দিকে এবিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের এসডিই আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, আসলে আর্মি (ইসিবি) সড়কটি এখনও আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। তাই আমরা কাজে হাত দিতে পারছিনা। তিনি জানান তার উর্ধতন কমকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন এ বিষয়ে একটি প্রাক্কলন প্রস্তুত করে রাখতে যাতে সড়কটি দায়িত্ব হস্তান্তরের সাথে সাথে কাজ শুরু করা যায়। কিন্ত কবে নাগাদ এই দায়িত্ব হস্তান্তর হবে সে বিষয়টি তার জানা নেই বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে জেলা সমন্বয় সভায় জেলা প্রশসক রাঙামাটি ইউএনওদের নির্দেশ দেন যে, তাদের কাছে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আসা আপদকালীন ব্রীজ মেরামত তহবিল থেকে এই ব্রীজটি নিয়ে কিছু করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল একটি বেসরকারী সংস্থার ভারী ট্রাক চট্টগ্রাম থেকে ড্রিলিংরিগ নিয়ে কাপ্তাই ঘুরে বেতবুনিয়ায় যাওয়ার পথে বেইলী ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি সকল সংস্থার অনাপত্তি নিয়ে তুলে নিয়ে গেলেও ব্রীজটি মেরামতে কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে রাজস্থলী, কাপ্তাই এবং বান্দরবানের সাথে রাঙামাটি জেলা সদরের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। শুধু যোগাযোগ নয় এই রাস্তা দিয়ে জুমের ফসল, কাচা সবজি বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকরা, স্কুল শিক্ষার্থী এবং জরুরী রোগীদের নিয়ে পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়। সড়কটিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি না থাকায় অনেক সময় মানুষ বরইছড়ি থেকে সাত কিলোমিটার পার হয়ে এসে জানতে পারেন রাস্তাটি বন্ধ। পরে তাকে আবার ফিরে যেতে হয়।