স্টাফ রিপোর্টার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : গত ১০ মাসে রাঙামাটিতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। এর মধ্যে ১টি ধর্ষণের পর হত্যা, ৯টি ধর্ষণ, ৭টি গণধর্ষণ, ২টি শারিরিক লাঞ্ছিত করা, ১২টি ধর্ষণ চেষ্টা ও ২টি যৌন হয়রানী। এর কোনোটিই বিচারের আওতায় আসেনি। এই হিসাব শুধুমাত্র পাহাড়ি নারীদের উপর চালানো জরিপের ফলাফল। বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পুগোবেলের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিদাতা সংস্থাগুলো হলো রয়েছে ব্লাস্ট, হিমাওয়ান্তি, উইভ, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাঙামাটিতে পাহাড়ি নারীরাই বেশী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সম্মেলনে সরবরাহ করা তথ্যে সহিংসতার সাথে জড়িতদের সাম্প্রদায়িক পরিচয় তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্লাস্টের রাঙামাটি সমন্বয়ক এ্যাড. জুয়েল দেওয়ান, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক এ্যাড. সুস্মিতা চাকমা, মহিলা পরিষদের রাঙামাটি সভাপতি মিনারা বেগম, পুগোবেলের নির্বাহী পরিচালক শান্তিপদ চাকমা, উইভের নির্বাহী পরিচালক নেইপ্রু নেলী। সংবাদ সম্মেলনে বিবৃতি পাঠ করেন পুগোবেলের কর্মকর্তা রিতা চাকমা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিচার হীনতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌন, শারিরিক, মানসিক নির্যাতন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিভিন্ন নীতিমালা থাকলেও নারী নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে। প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাদের কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। এতে অপরাধিরা এসব অপরাধ কর্মকান্ড পুণরায় ঘটাচ্ছে। এ সময় বলা হয় রাঙামাটিতে ২০০৮ সালে প্রথম জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোট ৩২২টি মামলা দায়ের করা হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৯ টি।এর মধ্যে মাত্র ১টি মামলার রায়ে আসামীর সাজা হয়েছে। বাকী ২৮টি মামলার কারোর সাজা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকারের কাছে ১২ দফা দাবী জানানো হয়। এগুলো হল, অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে আইনের আওতায় এনে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা। মামলায় সংশিষ্ট অভিযোগকারী এবং স্বাক্ষীসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে আইনকানুন এবং যে নীতিমালাগুলো রয়েছে তাদের যথাযথ পরীক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা। নারী বান্ধব গাইডলাইন প্রস্তুত করা এবং কর্মশালার মাধ্যমে আইন শৃংখলা বাহিনীকে লিঙ্গ বৈষম্য এবং জাতি বৈষম্য বিষয়ে ধারণা প্রদান করা। সরকারী ও বেসরকারী আইনীসহায়তা কার্যক্রমসমূহের ভিতর সমন্বয় সাধন করা। তিন পার্বত্যজেলাতে মেডিকেল পরীক্ষাদি সম্পন্নের জন্য ফরেনসিক বিভাগ স্থাপন করা। খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা। লিগ্যাল এইড নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আরো বৃহৎভাবে কাজ করা।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান