॥ মোহাম্মদ সোলায়মান ॥
৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকান্ডসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর হাতে নিহত সকল হত্যাকান্ডের বিচার অবশ্যই করতে হবে। পাশাপাশি তৎকালীন শান্তি বাহিনী নেতা হিসেবে শান্তিবাহিনীর সেই সময়ের নেতা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমাকে দায়ি করে ট্রাইবুনাল গঠন করে তারও বিচার করতে হবে বলে দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সম অধিকার আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেন পাহাড়ে সংগঠিত হত্যাকান্ডগুলোর বিচার না হওয়ার কারণেই এ এলাকায় খুন খারাবি থামছে না। তারা দাবি করেন শান্তির জন্য সরকার পার্বত্য চুক্তি করলেও পাহাড়ে শান্তিতো প্রতিষ্ঠা হয়ইনি বরং অস্ত্রবাজদের চাঁদাবাজির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। রোববার রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পাকুয়াখালী ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যা দিবসের শোক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে শোকসভা, কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
সভায় সকল বক্তাই অনতিবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চিরনী অভিযান পরিচালনা করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানায়। সম অধিকার আন্দোলনের লংগদু সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন, সম অধিকার আন্দোলন রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোঃ ইউনুচ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কামাল, সহ-সভাপতি নাদিরুজ্জামান, বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ সম অধিকার আন্দোলন ও বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে নিরীহ ৩৫ কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা হত্যা করার পর তৎকালীন সরকারের চারজন মন্ত্রী লংগদু এসে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পূর্ণবাসন ও হ্যতাকান্ডের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত এর কোনটাই হয়নি। মাত্র ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরনের টাকা দেয়ার পর কোন সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খবর রাখেনি। এ ছাড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোন মামলা গ্রহণ করেনি প্রশাসন এবং সরকারও কোন মামলা দেয়নি। এ কারণে খুনিরা পার পেয়ে গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীসহ সাধারণ পাহাড়িরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তির আহে একটি গ্রুপকে চাঁদা দিতে হতো বর্তমানে চারটি গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়। এসব সন্ত্রাসীদের চাঁদার কারণে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের শান্তি হারিয়ে গেছে। চাঁদাবাজিতে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে অবৈধ অস্ত্র। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে উপজাতীয় সন্্রতাসীরা চলাফেরা করলেও প্রশাসন তাদের ব্যাপারে কান ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাহাড়ের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। তাই সময় থাকতে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
আলোচনা শেষে নিহত ৩৫ কাঠুরীয়ার গণকবর জিয়ারত শেষে মুনুজাত করা হয়। পরে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন সম অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টম্বর লংগদু উপজেলা সীমান্তবর্তী পাকুয়াখালীতে তৎকালীন শান্তি বাহিনী নির্মমভাবে ৩৫জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে একই দিনে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২২ বছরেও ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। সরকারের আশ^াসের পরও পূর্নবাসন করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের । এদিকে এ ঘটনার বিচার না হওয়ায় হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদ্যসরা আর এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় বাঙ্গালীদের মাঝে।