৫৩ বছর ধরে অদম্য এক কলম সৈনিকের নাম মকছুদ আহাম্মেদ

142

॥ আনোয়ার আল হক ॥

অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুধা দারিদ্রে জর্জরিত, নানাভাবে শোষিত ও বঞ্চিত জনপদের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মিশন নিয়ে যিনি শিক্ষকতা ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছিলেন সাংবাকিতার কলম। যোগাযোগে দুর্গম পাহাড়ি পথ যিনি চড়ে ফিরেছেন মানুষের দুঃখ দুদর্শা প্রত্যক্ষ করে জাতিকে জানাবার আকাক্সক্ষায় সেই জন দরদি সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহাম্মেদ এর সাংবাকিতার বয়স আজ তিপ্পান্ন ছুঁয়েছে।

এই পাঁচ দশকের কাল পরিক্রমায় নিজের পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর কর্মগুণে সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহাম্মেদ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজেই এক প্রতিষ্টানে পরিণত হয়েছেন। নামই যার পরিচয়, সবার কাছে যিনি শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় সিক্ত। পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ক্রিড়াবিদ কিংবা সাংবাদিক; তদুপরি কবি-সাহিত্যিক সবার কাছেই তিনি শ্রদ্ধার পাত্র।

বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই কিন্তু সাংবাদিকতার কলম হাতে যিনি এখনও অদম্য। এখনও নিয়মিত অফিসে বসে কাজ করেন একজন উদ্দীপ্ত তরুণের মতই। সেই অদম্য মানুষটির কাছে বার্ধক্য আজও অজেয়। তার হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে বহু সাংবাদিক। যিনি কুয়াশার চাদর ভেদ করে রৌদ্রালোকে নিয়ে এসেছেন অনেক কবি সাহিত্যিককে। যার শিষ্যরা তারই শিক্ষায় পথ চলে একুশে পদকে ভ’ষিত হয়ে দেশ জোড়া সুনাম কুড়িয়েছেন। রাজনীতির সর্বোচচ শিখরে পৌঁছে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিংবা রাজধানীর টেবিলে টেবিলে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে বড় বড় আসন অলংকৃত করছেন এমন অসংখ্য মানুষের আজকের অবস্থানের পিছনের সূত্রধর ছিলেন আলহাজ্ব একে এম মকছুদ আহমেদ।

৭১ এর অগ্নিঝরা দিনগুলোতে যিনি স্ব মহিমায় তার কলম চালিয়ে গেছেন। একজন সংবাদসেবি হিসেবে সরুচোখে অবলোকন করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের মহিমান্বিত সকল অধ্যায়। ইতিহাসের এই কিংবদন্তি পুরুষ আজও কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। সাংবাকিতা করতে গিয়ে তিনি বুঝেছিলেন, যে অঞ্চলের প্রতিটি বাঁকে কোনো না কোনো সমস্যা এবং সংবাদের পাথেয় রয়েছে। যে এলাকায় সমস্যার অন্ত নেই, তেমনই একটি অঞ্চলের নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম। জাতীয় পত্রিকার বড় পরিসরে সারাদেশের সংবাদের ভিড়ে এই এলাকার মানুষের কথাগুলো তৃপ্তিভরে বলা খুবই কঠিন। তাই তিনি নিজেই এক সময় পত্রিকা বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রকাশ করেছিলেন সাপ্তাহিক বনভূমি। কিন্তু সাপ্তাহিক পত্রিকায়ও যখন সংবাদের স্থান সংকুলান হচ্ছিলনা; তখন অসীম সাহস নিয়ে নিয়ে শুরু করেছিলেন দৈনিক পত্রিকা। যার নাম দৈনিক গিরিদর্পণ। পাহাড়ের মানুষের জন্য আয়না হয়ে উঠেছিল এই গিরিদর্পণ। সীমাহীন অর্থনৈতিক টানাপোড়নের মাঝেও তিনি খেয়ে না খেয়ে এই পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন গত চার দশক ধরে।

গিরিদর্পণের পাতায় তিনি প্রতিনিয়ত পাহাড়ের মানুষের সাম্প্রদায়িক টানাপোড়ন থেকে শুরু করে, হিংসা হানাহানির চিত্র তুলে ধরে দেশ ও জাতিকে সচেতন করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় পার্বত্য শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই গিরিদর্পণকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির পেছনের শক্তি বললে ভুল হবে না।

৫৩ বছরের সাংবাকিতা জীবনে তার প্রাপ্তির হিসাব নিতান্তই কম। তার ভক্তরা মনেপ্রাণে আশা করে চারণ সাংবাদিক খ্যাত এই বর্ষিয়ান সাংবাদিক জাতীয় স্বীকৃতি পেয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে থাক। সে কারণেই তার একুশে পদকের দাবি উঠেছে আজ সারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সংগঠনের কণ্ঠে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তিনি তার কাজের স্বীকৃতি একদিন অবশ্যই পাবেন; সে জন্য অপেক্ষার প্রহর ফুরানো সময় হয়ে গেছে। কারণ তিনি বেঁচে থাকতেই এমন স্বীকৃতি গলায় ঝুলাতে পারলে হয়তো তিনি পরম শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। তাই আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি যারা একুশে পদকের জন্য ব্যক্তিত্ব নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা এবার একটু নড়ে বসুন। শুধু বড় শহর আর রাজধানী কেন্দ্রিক গুণী তালাশ না করে মফস্বলের দিকে আপনাদের দৃষ্টি ফেরান; সেখানে হয়তো সবার আগে আপনারা একেএম মকছুদ আহমেদকে দেখতে পাবেন।