৯৭ পাউন্ড কেক ও র‌্যালী করে বনভান্তের জন্মদিন পালন

716

Exif_JPEG_420

 
জুরাছড়ি সংবাদদদাতা, ৯ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : মহান আর্য্য পুরুষ শ্রাবক বুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনান্দ মহাস্থবির  বনভান্তের ৯৭ তম শুভ জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে শলক জুরাছড়ি ও বরকল এলাকাবাসীর উদ্যগে শুক্রবার বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করা হয়। র‌্যালীটি  রাঙামাটি পাবলিক হেল্থ এলাকা থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজবনবিহারে গিয়ে র‌্যালীটি শেষ হয়। র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উদয়জয় চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, সদস্য সুবির কুমার চাকমা, প্রাক্তন জেলা জজ দীপেন দেওয়ান, জুরাছড়ি উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রবর্তক চাকমা, ১নং ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা, ২নং বনযোগীছড়া ইউপি  সফল চেয়ারম্যন সুরেশ কুমার চাকমা, সুবলংশাখা বনবিহারের সভাপতি ধলকুমার চাকমা প্রমূখ। এসময় শলক অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো পূন্যার্থী র‌্যালীতে অংশ গ্রহণ করে।

পরে দেবমানব তথা বিশ্বের হিতসূখ মঙ্গল কামনাকারী শ্রীমৎ সাধনান্দ মহাস্থবির বনভান্তের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে জুরাছড়িবাসীর পক্ষ থেকে একটি ৯৭ পাউন্ড ওজনের কেক নিয়ে আসা হয়। জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা ও জেলা পরিষদ সদস্য জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমার তেতৃত্বে ভক্তরা কেকটি বনবিহার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় ১নং জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমাসহ উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সাথে ছিলেন।

দিঘীনালা বন বিহারে বনভান্তের জন্মবার্ষিকী :

বিহারী চাকমা- সর্বজনপুজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের সাধনায় সিদ্ধিলাভের স্থান হিসেবে পরিচিত দিঘীনালা বন বিহারে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যপুর্ণভাবে পালিত হয়েছে বনভান্তের ৯৭তম জন্ম বার্ষিকী। শুক্রবার সকালে বনভান্তের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে জন্ম বার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় বনভান্তের প্রতিকৃতির স্থানটি দায়ক-দায়িকা ও ভক্তদের দেয়া পুষ্পমাল্য আর রঙ-বেরঙের ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে।

বনভান্তের প্রধান শিষ্য নন্দপাল মহাস্থবির প্রথমে বনভান্তের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে একে একে ভিক্ষুসংঘ, দিঘীনালা ইউনিয়ন পরিষদ, দিঘীনালা বন বিহার পরিচালনা কমিটি, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উন্নয়ন কর্মী ও সর্বস্তরের মানুষ বনভান্তের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর জন্ম দিনে বনভান্তের পক্ষে কেক কাটেন নন্দপাল মহাস্থবির। এসময় সাধু সাধু ধ্বনিতে দিঘীনালা বন বিহারের চারিদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। বহুদুর থেকে শোনা যায় বুদ্ধ ধর্ম সংঘ ও বনভান্তের জয় ধ্বনি ।

সকাল নয়টায় পঞ্চশীল গ্রহণ, বুদ্ধমুর্তি দান, সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, হাজার প্রদীপ দানসহ বিভিন্ন দানীয় সামগ্রী দান করা হয়। অনুষ্ঠানে সদ্ধর্ম দেশনা দেন বনভান্তের প্রধান শিষ্য নন্দপাল মহাস্থবির। সদ্ধর্ম দেশনায় তিনি বলেন, বনভান্তে পরিনির্বাপিত হলেও তিনি আমাদের পাশে আছেন। তাঁর ধ্যান-সাধনা, জ্ঞানমুলক শিক্ষা, তাঁর কর্মময় জীবনের সবকিছুই আমাদেরকে সবসময় অনুপ্রেরণা দেয়। তাঁর ধর্মবাণী, উপদেশ, সদ্ধর্ম দেশনা সবকিছু আমাদের সাথে রয়েছে।

তাঁর প্রদর্শিত পথে আমাদের চলতে হবে। বনভান্তের মত মহাপুরুষ আমাদের জাতিতে আরো উৎপন্ন হওয়া প্রয়োজন এবং আমি এই প্রার্থনা করি। তিনি আরো বলেন, বনভান্তে উৎপন্ন হওয়ায় পার্বত্য এলাকার মানুষ সত্যধর্ম সম্পর্কে সম্যক ধ্যান-ধারণা পেয়েছে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দিঘীনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা, কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দিঘীনালা বন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশ্ব কল্যাণ চাকমাসহ শিক্ষক, উন্নয়ন কর্মী, ব্যবসায়ী ও অগণিত ভক্তবৃন্দ জন্ম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে বনভান্তের স্মরণে আনাপান স্মৃতি ভাবনা করা হয়।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান