অং সান সূচীর প্রতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের আহ্বান: রাখাইনে মুসলিম গণহত্যা বন্ধ করুন

791

স্টাফ রিপোর্ট- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি(প্রেস বিজ্ঞপ্তি): মিয়ানমারের সামরিক সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, গণধর্ষণ এবং তাদের বাড়ি-ঘর জালিয়ে দেয়্য় উদ্বেগ প্রকাশ করেন- বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট’র (এনডিএ) সভাপতি- মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু)। একই সাথে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, গত ২৫ আগষ্ট, ২০১৭ ইং তারিখ এ মিয়ানমারের রাখাইনের মুসলমান অধিষ্ঠিত এলাকার ২০টি পুলিশ চেকপোষ্টে কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১২ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এ অপরাধে মিয়ানমারের অং সান সূচী সরকার রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপারেশন ক্লিয়ারেন্স সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। ইতোমধ্যে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মেইটু মনটিং বুসিং পাহাড়ের পাদদেশে মিয়ানমার সেনারা ১২ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা যুবককে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে একসঙ্গে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা অসংখ্য মুসলিম রোহিঙ্গা যুবতী নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।

তাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দু’দেশের সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা অচিরেই ১০/১২ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোপূর্বে আশ্রয়কৃত মুসলিম রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ৮ লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে তাদেরকে অন্ন, বস্ত্র, সাময়িক বাসস্থান ও চিকিৎসা দেয়া অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। শরণার্থীদের জন্য সরকার কর্তৃক যে সাহায্য দেয়া হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল। বিদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ থেকে ইতোমধ্যে যে ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশে এসে পৌছেছে তার পরিমাণও চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্ন।

আমরা জানি, বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা- মানুষ হত্যা তো দূরের কথা জীবজন্তু, পশুপাখি, গাছপালা হত্যাও মহাপাপ। গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রধান ব্যক্তিত্ব অং সান সূচী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা ধারণাই করতে পারিনা যে, তাঁর সরকার কিভাবে মানবতা লঙ্ঘন করে অসহায় মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাতে পারে। অং সান সূচী ও মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন হাঙ্গ লেইঙ্গকে (গরহ ঐঁহম ঐষধরহম) অবিলম্বে রাখাইনে মুসলিম জাতিগত নিধন বন্ধ করতে হবে। সংঘটিত গণহত্যার জন্য ঘাতক মিন হাঙ্গ লেইঙ্গকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তিনি ধারণা করে বলেন, বিশ্বে বৌদ্ধ ও মুসলিম জাতি সবসময় শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করে আসছেন। কিন্তু এ ঘটনা সেই স¤প্রীতি ধ্বংস করবে। যদি মিয়ানমারের সূচী সরকার ও সামরিক জান্তা প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা সকল রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাদের নিজ আবাসভূমি রাখাইন প্রদেশে যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তাসহ পুনর্বাসন করতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিকমনা মুসলিম জনসাধারণ এদেশ থেকে সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জাতিগোষ্ঠীকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফেলে আসা আবাসভূমিতে বিতাড়িত করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার আহ্বান, অনতিবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে অতিরিক্ত ২ ডিভিশন সেনাসদস্য মোতায়েন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে শৃঙ্খলার সাথে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ তদারকীসহ তাদেরকে সাময়িক পুনর্বাসন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় সজাগ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী “আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মী” নামক সংগঠনের নামে কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী দ্বারা রাখাইনের ২০ নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়ে ১২ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে নাটক সাজিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট মোকাবেলায় বর্তমান সরকারকে ত্রাণসামগ্রী ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য দেশবাসীর মধ্যে যারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী তাদেরকে সবিনয় আহ্বান জানিয়ে ইসলামী বিধান অনুযায়ী যাকাতের অর্থ রোহিঙ্গাত্রাণ ভান্ডারে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করেন।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।