॥ রাঙামাটি রিপোর্ট ॥
দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে কল্পলোকে থাকা রাঙামাটির প্রস্তাবিত ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজটি অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। নানারকম জটিলতার বেড়াজাল ছিন্ন করে এবং প্রাসাদ য়ড়যন্ত্রের বাধা পেরিয়ে সোমবার দুপুরে বহুল কাঙ্খিত রাঙামাটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের জমির কাগজপত্র ক্যান্টেন্টম্যান্ট বোর্ডের প্রতিনিধিদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনাঢ়ম্বর সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন তথা ৩০৫ পদাতিক ডিভিশনের রিজিয়ন অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ রিয়াদ মেহমুদের হাতে বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্তি হওয়া ১৩ একর জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
এ সময় বিএফডিসি রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোঃ আসাদুজ্জামান, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম নজরুল ইসলাম, রাঙামাটি রিজিয়নের জি-টু আই মেজর সৈয়দ তানভীর সালেহ্্সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পিছিয়ে পড়া পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৮০ এর দশকে এ জেলায় ক্যান্টেন্টম্যান্ট পাবলিক স্কুল নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সে সময় নানা জটিলতায় বিষয়টি বেশিদুর এগুয়নি। পরে ২০০২ সালে ক্যান্টেন্টম্যান্ট বোর্ড থেকে এই বিদ্যালয় নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তহবিল ছাড় করা হয়। কিন্তু স্থানীয় কিছু নেতৃবৃন্দের প্রচ্ছন্ন বিরোধিতাসহ ভূমি জটলতায় সে তহবিল একে একে তিনবার ফেরত যায়। অবশেষে রাঙামাটি শহরের টিভি সেন্টার এলাকায় রাঙামাটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের জন্য সাড়ে ১৪ একর সরকারী খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্বাচন করা হলেও এর আনুষ্ঠানিকতা সারতে পেরিয়ে যায় আরো কয়েক বছর। অবশেষে সম্প্রতি বিদ্যালয়টির জন্য ১৩ একর জমি বন্দোবস্তি প্রদানের কাজ সম্পন্ন করে সালামির টাকা পরিশোধ করা হয়। সোমবার সেই জমির কাগজপত্রই সেনা কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এই বিদ্যালয় ও কলেজটি স্থাপিত হলে রাঙামাটি জেলার শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে বলে মনে করে স্থানীয় সুশীল সমাজ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সারাদেশেই ক্যান্টেন্টম্যান্ট বোর্ড পরিচালিত ক্যান্ট পাবলিক স্কুলগুলো জনগণের আস্থার মূর্ত প্রতীক। এই বিদ্যালয়গুলো সুনাম এবং সাফল্য যেমন সর্বজনবিদিত, তেমনি এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাচ্চাদের পড়াতে পারলে অভিভাবকরা গর্ব এবং নিশ্চিন্ত বোধ করেন। রাঙামাটির পরে প্রস্তাব উঠেও পার্শ্ববর্তী বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার ক্যান্ট পাবলিক স্কুলগুলো ইতোমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট এবং সাফল্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাঙামাটির জেলারও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ওই দুই জেলায় গিয়ে লেখাপড়া করছে।
জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে রিজিয়ন কমান্ডার রিয়াদ মেহমুদ পিএসসি বলেন- অনেক আগেই এই জেলায় ক্যান্টেনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাঙামাটিতে জায়গা না পাওয়ায় বান্দরবার ও খাগড়াছড়িতে করা হয়েছে। অবশেষে রাঙামাটিতে জায়গা পাওয়ায় এখানেও কলেজটি স্থাপনের দ্বার উন্মুক্ত হলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অতি শীঘ্রই কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং এর আবয়ব সবার সামনে প্রতিভাত হবে।