অবশেষে রাঙামাটি আসনে দীপংকর তালুকদারই নৌকার মাঝি

561

 

স্টাফরিপোর্ট- ২৫ নভেম্বর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি:

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নৌকার মাঝি হতে দলীয় টিকিট পেলেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার। ২৯৯নং পার্বত্য রাঙামাটি সংসদীয় আসনের জন্য রোববার দুপুরে তার মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়। প্রথমে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলে আলোচন-সমালোচনায় চরদিক মুখরিত হলেও বিকেল নাগাদ দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত চিঠিটি তার হাতে পৌঁছে। আনন্দ উল্লাশে মুখরিত হয় রাঙামাটি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। যেন মৃত্যুপুরিতে প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতো।

আমাদের সংবাদ দাতা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের যখন সারাদেশে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ চলছিল; সেসময় পাহাড়ের রাজনীতির মাঠে গুজব উঠে যে, এবার রাঙামাটি আসনটি ১৪দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোনো বাম নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এতে রাঙামাটি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মনমরা হয়ে পড়ে। তবে দলীয় নেত্রীর প্রতি অগাধ আস্থা রেখে দীপংকর তালুকদার নিশ্চুপ থাকেন। অবশেষে সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে দলের টিকেট পেলেন দাদা দীপংকর তালুকদার। দলীয় প্রধানের স্বাক্ষরিত পত্রটি দীপংকর তালুকদার সোমবার নিজেই সংগ্রহ করেন। এই চিঠি প্রাপ্তির মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো পার্বত্য রাঙামাটি আসনে দীপংকর তালুকদারের কোনো বিকল্প নেই।

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগে একক ভাবে নির্বাচন করে। তবে ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এবারের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগেকে মহাজোট গঠন করে নির্বাচন করতে হয়। এতে দীপংকর তালুকদারের বিকল্প কোন প্রার্থী ছিলনা।

দীপংকর তালুকদার ১৯৫২ সালের ১২ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মাান) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনীতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করে আসছেন। ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে যে কজন নেতা এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল, দীপংকর তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৬৯ ও ১৯৮৭ এর গণঅভূত্থানে অংশগ্রহণ করে তিনি দু’বার কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র সংসদের সদস্য এবং ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-৭৪ সালে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ইংরেজি বিভাগীয় সমিতির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৮৬ সালে তিনি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আবার কারারুদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৬ ও ২০০২ সালে তিনি পরপর দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখন পর্যন্ত তিনি দলের নেতাকর্মীদের সমর্থনে সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে রাঙামাটির ২৯৯ আসন থেকে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ শিক্ষা কমিটি, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় সংসদ হাউস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। ২০০৯ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন।

নির্বাচনে বহুল কাঙ্খিত দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় দলের হাই কমান্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে রাঙামাটির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, দীপংকর তালুকদার রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং অতীতেও করে এসেছেন। তার বিকল্প কেউ হতে পারে না। তিনি হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। আমরা রাঙামাটিবাসী দীপংকর তালুকদারকেই একক প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে নেত্রীর নিকট আমাদের চাওয়ার কথা বিভিন্ন ভাবে জানিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ করে রাঙামাটিতে নৌকার একমাত্র মাঝি দীপংকর তালুকদার। অবশেষে পাহাড়ের মানুষের মনের কথা অনুধাবন করে আমাদের জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাদাকে দলের নৌকা প্রতিকটি তুলে দিয়েছেন। দাদাকে যথাযত মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো পাহাড়ি-বাঙালি এক ঘর, আমরা সবাই দীপংকর এই শ্লোগান নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করে শেখ হাসিনার সম্মান রক্ষা করা। চিনু বলেন, আমরা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির উন্নয়নে এতসব কাজ করেছি, মাঠে মাঠে এত দৌঁড়ালাম, মানুষে ঘরে ঘরে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছিয়ে দিলাম। আমাদের এ কাজের কথা মনে রেখে এবারের নির্বাচনে দলকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে আপামর রাঙামাটিবাসীর কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।