॥ গোলাম মোস্তফা ॥
রাঙামাটির শহরের বাণিজ্যিক এলাকা রিজার্ভ বাজারের নীচের রাস্তা নামে পরিচিত এসপি অফিস সংলগ্ন সড়কটি ঘিরে দুই দশকের অবহেলার অবসান হতে যাচ্ছে সহসাই। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অজ্ঞাত কারণে ঘুমিয়ে থাকা কর্তপক্ষ এবার জেগে উঠেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বর নাগাদ সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। ইতোমধ্যে সংস্কার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই সড়কটি ঘিরে পত্রপত্রিকায় এন্তার লেখালেখি ছাড়াও জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বহুবার রেজুলেশন হওয়ার পরও সড়ক কর্তৃপক্ষ আন্তরিক না থাকায় রাজপথটি দিনে দিনে গলিপথে পরিণত হয়েছে। এক সময় এই সড়কটিই ছিল রাঙামাটি শহরের প্রধান সড়ক। এলাকার অভিজ্ঞজনদের মতে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি একটি চক্রের ষড়যন্ত্রে সড়কটির সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এই সড়কের পাশে কোনো বাড়িঘর বা লোকালয় ছিল না। খানাখন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া সড়কটি এক সময় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েলে উন্নয়ন বোর্ডে সামনে নিয়ে চলে যাওয়া বিকল্প সড়কটি দিয়ে চলাচল শুরু করে ভারি যানবাহন। যদিও তখন এই সড়কে ‘ভারি যানবাহন চলাচল নিষেধ’ সাইনবোর্ড লাগানো ছিল। এসপি অফিসের পাশের মোড়ে থাকা ট্রাফিক পোস্টটিতে তখন দিনভর ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে। দিনে দিনে অকার্যকর হয়ে পড়ে এই পোস্ট। এখন সেটা শুধুই কালের স্বাক্ষী।
যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিরব হয়ে পড়া সড়টিতে দখলে হিড়িক লেগে যায় এবং রাতারাতি গড়ে উঠে লোকালয়। এখন সড়ক আর পাহাড় কাটতে কাটতে এই সড়কটি যেমন গলিপথে পরিণত হয়েছে, তেমনি ইতিহাস মুছে গিয়ে রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। এই ইতিহাস পাল্টানো এখন সত্যিই দুরহ কাজ বলে মত প্রকাশ করেছে আইন-শঙ্খলা সভার সভ্যগণ। কারণ মাঝে কয়েক বছর আগে এই সড়কটি নতুন করে কার্পেটিং করে চালু করার চেষ্টা করা হলেও দখলদারদের দৌরাত্মে সে উদ্যোগ সফল হয়নি। পরে আবারও সড়কটি খানা-খন্দে ভরে উঠে। চলতি মাসের আইন-শৃঙ্খলা সভায়ও বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। যদিও তার আগের কয়েকটি সভা থেকেই রেজুলেশন ছিল সড়কটি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে নতুনভাবে চালু করার। এবার অবশ্য দখলমুক্ত করতে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই জেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে।
সড়কটি গর্তে ভরে ওঠায় এবং সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে গড়ে ওঠা বসতির বাসিন্দারা নিজেরাই এখন বিপাকে। তারা অবশ্য দাবি করেছে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে। এক সময় কোনো বাড়িঘর না থাকা নিচের রাস্তাটি এখন ঘনবসতিপূর্ন এলাকা। এ রাস্তা দিয়ে হাজারো পথচারির চলাচল। সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের হাঁটাচলা করাই দুস্কর হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি ভেঙ্গে গিয়ে প্রায় চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তার বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় গর্তেরা সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে ছোট ও মাঝারি যানবাহন আটকে গিয়ে দুর্ভোগে পোহাতে হয়।
রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর করিম আকবর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিচের রাস্তা এলাকার বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা রাস্তাটি সংস্কারে কথা জেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা সভায় বার বার বলা হলেও সংস্কারে দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কার করবে বলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেছেন। আমি প্রতিনিয়তই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছি কিন্তু তারা কেন সংস্কার কাজে হাত দিচ্ছেনা তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই এলাকার ৭’শ মিটার রাস্তাটির কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে এর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। সহসাই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি নাহয় সেজন্য রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তার পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনও নির্মাণ করবে। তিনি আরো বলেন, রাস্তাটি রক্ষা করতে হলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে তা না হলে এটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তাই রাঙামাটি পৌরসভার সাথে সমন্বয় করে আমরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো।
সড়কটি ঘিরে আশা-নিরাশার দোলাচলে এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া ওই এলাকায়। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ভবন তৈরির প্রতিযোগীতা।