॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
কোনো বিনিময় বা তদবিরের দরকার হয়নি, ছিল না কোনো বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি। ¯্রফে নিজের যোগ্যতাই যাদের এনে দিলো সফলতা, এরকম কিছু তরুণ তরুণী অশ্রুসজল নয়নে কৃতজ্ঞতা জানালেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের প্রতি। কোনো লেন-দেন ছাড়াও সরকারি চাকরি পাওয়া যায়, এযুগে এমন কথা অবিশ্বাস্য মনে করেছিল যে পরিবারগুলো। তাদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে পুলিশে নিয়োগ পেয়েছে সন্তানরা।
‘আমার মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশ হবো, কিন্তু তিনি বলতেন স্বপ্ন থাকলেই তো হবে না, আমাদের কাছে তো টাকা নেই, নেই বড় কর্তাদের দ্বারে দ্বারে তদবির করা কেউ। তাই আমি যখন মাকে বললাম মা আশির্বাদ করো আমি পুলিশে চাকুরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি, তখন মা বললেন, যাও মা তোমার জন্য প্রাণ ভরে আশির্বাদ করছি, কারণ সেটাই তো আমাদের একমাত্র সম্বল। সেই মাকে যখন জানালাম মা আমি পুলিশের চাকুরীটা পেয়ে গেছি, মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন এমনকি আমার সাথে আর কোনো কথাই বলতে পারলেন না। পরে ফোন করে বললে এই এসপি মানুষ না আমাদের জন্য দেবতা, তাকে আমাদের শত প্রণাম’। এ ভাবেই অশ্রু সজল নয়নে সাংবাদিকদের কাছে নিজের অনভূতি ব্যক্ত করলেন সদ্য কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া জেসমিন চাকমা। জেসমিন রাঙামাটি সদরের বসন্ত এলাকার বাসিন্দা।
এভাবে নিজেদের অপার অনুভূতির কথা জানালো পুলিশে চাকুরী পাওয়া অন্যান্য তরুণ তরুণীরাও। রাঙামাটির দূর্গমাঞ্চলের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এই আসা ১৭ তরুণ-তরুণী পেয়েছেন পুলিশের চাকুরি। পুলিশ সুপার জানান, অত্যন্ত কঠিন প্রতিযোগিতামূলক, তদবিরবিহীন, প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৭ প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়। সবধরনের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই অংশগ্রহণকারিদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ মেধাবীদের বেছে বেছে নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগে অনিয়ম ঠেকাতে প্রথম থেকেই তৎপর ছিল জেলা পুলিশ। শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন ও মেধাবী ১৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা প্রাধান্য দিয়েছি যোগ্যতাকে, তারপরের ধাপে প্রাধান্য পেয়েছে তাদের মনস্তাত্বিক দৃঢ়তা এবং উপস্থিত বৃদ্ধি। কারো কোন তদবির বা পরিচয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
পুলিশ সুপার জানান, বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ সেপ্টেম্বর-২০২৪ খ্রি. উপলক্ষে রাঙামাটি হতে ১৪ জন পুরুষ এবং ০৩ জন নারী প্রার্থী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত অন্যান্যরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, জুমচাষী পিতা-মাতার নিদারুন কষ্টের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে অবশেষে এই চাকুরি প্রাপ্তিতে পাহাড়ের দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে স্বস্তি ফেরার পাশাপাশি পুলিশের ভাবমূর্তি ফেরাতে তাদের মেধার সব্বোর্চটুকু দিয়ে দেশের জনগণের জন্য সেবা দিবেন তারা।
গত ১৯ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ (মঙ্গলবার) রাঙামাটি পার্বত্য জেলার নিউ পুলিশ লাইন্স মাঠে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ সেপ্টেম্বর-২০২৪ খ্রি. এর লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিউ পুলিশ লাইন্সে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার পরে পর্যায়ক্রমে শারীরিক, লিখিত, মৌখিক এবং মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ জন প্রার্থী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯, ৩০, ৩১ অক্টোবর ২০২৪খ্রি. তারিখ রাঙামাটি জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ, সেপ্টেম্বর-২০২৪ এর শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ০৩ দিন ব্যাপী শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় ৬৪৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। ০৭টি ইভেন্টে অনুষ্ঠিত হওয়া শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২৫ জন প্রার্থী গত ১২ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া ৩১ জন (মেধা কোটা ২৭ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ০৪ জন) প্রার্থীর মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা গত ১৯ নভেম্বর সুখী নীলগঞ্জস্থ নিউ পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত হয়।