আজ মহান বিজয় দিবস

728

bijoy-dibos

স্টাফ রিপোর্টার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির সংগ্রামে উত্তাল ৭১ এর মহান বিজয়ের চেতনায় সারা দেশবাসীর মত পার্বত্যবাসীও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দিবসটি পালন করছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে পার্বত্য রাঙামাটির জেলাপ্রশাসন দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজয় দিবসের পূর্বক্ষণে আরো দু’জন যুদ্ধাপারাধীর বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করছে দেশবাসী।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে কাক্সিক্ষত বিজয়ে এই দিনটি সারা বাংলার মানুষের মনে প্রতি বছর নিয়ে আসে এক নতুন বারতা, ‘‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য”-আনার দিন আজ। আজকের দিনটি এই সবুজ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন- ‘মহান বিজয় দিবস’। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ জনপদে ভিসুভিয়াসের মতো যে স্বাধীনতার অনির্বাণ শিখা জ্বলে উঠেছিল; তাই বাংলার ঘরে ঘরে প্রবাহিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বরের এ দিনে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনে। ৪৩ বছর আগের এই দিনটি বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন এবং ২৫ মার্চ ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার পর ১৬ ডিসেম্বর রক্তলাল সূর্যোদয় বয়ে এনেছিল বহু প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা। এদিন সূচিত হয়েছিল মহান বিজয়। ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসন বিরোধী সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একাত্তরের পহেলা মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের বিষয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার পর আপামর জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মার্চের পয়লা সপ্তাহ থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত-কলকারখানা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে দেশ।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার বিশাল জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ”। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ বাঙালি জাতি চূড়ান্ত সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সারাদেশে বেজে ওঠে স্বাধীনতার দামামা। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এর পরে দীর্ঘ নয় মাসের ইতিহাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজের মাধ্যমে মানবজাতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার ন্যক্কারজনক অধ্যায়; আর এ ঘৃণ্য ইতিহাসের বিপরীতে তখন রচিত হয় ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়, মুক্তিকামী বাঙালির বীরত্বগাঁথা। একাত্তরের ১৭ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী সরকার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় দখলদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

আজ ১৬ ডিসেম্বর ভোরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীর শহীদদের অমর স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আজ সরকারি ছুটি। গত রাত ১২টা ১ মিনিটে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সারাদেশে উত্তোলন করা হয়েছে জাতীয় পতাকা। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বেতার ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিশু, ছাত্র, যুব, নারী সংগঠন, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও আজকের কর্মসূচিতে রয়েছে সেমিনার, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ তাঁর বাণীতে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য হিসেবে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লে¬খ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে দেশবাসীকে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক, স্বৈরাচারী ও চিহ্নিত প্রতিক্রিয়াশীল মহলের সঙ্ঘবদ্ধ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেন যে কোনো মূল্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করবো আমরা। ইতোমধ্যে চারটি রায় কার্যকর হয়েছে, বাকি রায়গুলোও ক্রমান্বয়ে কার্যকর করা হবে।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান