স্টাফ রিপোর্টার- দৈনিক রাঙামাটি: অভিবাসী শ্রমিকদের পেছনে সরকারের তেমন কোনো খরচ নেই। শ্রমিকেরা নিজেরা টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে ফেরেন। শ্রমিকেরা সঞ্চয় করেন, তা দিয়েই তারা সুনির্দিষ্ট আয়ের পথ তৈরি করতে পারে না। অভিবাসীদের আয় থেকে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এই শ্রমিকদের দিকে একটু বেশি নজর দিতে হবে। প্রবাসী অভিবাসীদের দুর্দশার সময়ে তাদের পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন। গত ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদে চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-এর সচিব বেগম শামছুন নাহার এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম. এ. সবুর প্রমূখ।
ছায়া সংসদ অনুষ্ঠান শেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালীকরণে অভিবাসীদের অবদান’ শীর্ষক এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলোজি বিজয়ী হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বিষয়ে মসিউর রহমান বলেন, ব্যাংকটির পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে চালু হওয়ার কথা ছিল। তা হয়নি। অথচ এ ব্যাংককে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকের মতোই কর দেওয়া, সিএসআরের আওতায় আসাসহ সব দায়দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বর্তমানে একটি সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন, ব্যাংকটি আসল উদ্দেশ্য পূরণের ক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে কি না বা ভবিষ্যতে পারবে কি না। তিনি প্রবাসীদের জন্য সরকারের দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে অভিবাসন খাতের ওপর আরো গুরুত্বারোপ করেন। প্রবাসীদের পরিবারের দুর্দশায় পাশে দাড়ানোরও আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী পরিবারের সহযোগিতায় সিএসআর কার্যক্রম সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব বেগম শামছুন নাহার বলেন, প্রতি বছর শ্রম বাজারে প্রায় ২০ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৫ লাখ আর বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ লোকের। বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচী এবং এ মন্ত্রণালয়ে স্বল্প বাজেটের উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশে মাথাপিছু রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৫০০ মার্কিন ডলার যেখানে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকায় এর পরিমাণ ৪০০০ মার্কিন ডলার। তাই এ খাতে বিনিয়োগ দরকার।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিরাপদ ও নৈতিক অভিবাসনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল বিদেশে কর্মী প্রেরণ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, কর্মীদের বেতন, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে ন্যায্যতা আদায়ে রিসিভিং কান্ট্রিগুলোর সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী দর কষাকষি ও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, অন্য যে কোন খাতের চেয়ে আমাদের অভিবাসন খাতে আয় বেশি। অভিবাসন খাতই এখন সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তাই প্রবাসীদের নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে সার্বিক ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে প্রবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে আসলে তাদের সরকারীভাবে বিশেষ সনদপত্র প্রদান করার দাবী করেন তিনি। এ খাতের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ, স্বল্প সুদে ঋণ, প্রশিক্ষণের যন্ত্রপাতি আমদানীতে শুল্ক রেয়াত দেওয়া জরুরী। কিরণ বলেন, নিরাপদ অভিবাসনের জন্য কর্মী প্রেরণকারীদের নৈতিক মুল্যবোধ বিবেচনায় রাখতে হবে। আবার যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তারাও যেন হুজুগে পড়ে কোন কিছু না জেনেই বিদেশ না যান। বিদেশ যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই তারা যেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর মাধ্যমে নিয়োগকর্তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশে যান। তিনি দক্ষ কর্মী ও প্রফেশনালস পাঠানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর বলেন, অভিবাসীর সংখ্যা ১ কোটির চেয়ে অনেক বেশি। যারা ফরমাল ভাবে বিদেশ যায় তাদেরই নিবন্ধন হয় আর যারা ইনফরমাল ভাবে বিদেশে যায় তাদের নিবন্ধন হয় না। তাই এ সংখ্যা নিবন্ধনকৃত সংখ্যার অনেক বেশি। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের আয়ের অবদানের উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকসহ জাতীয় পর্যায়ে চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের ট্রফি, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব মো. সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড-এর মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এনডিসি, বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সাংবাদিক, গবেষক, এনজিওসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো অপিষ থেকে। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬