স্টাফ রিপোর্ট- ৮ মার্চ ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি): আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে খাগড়াছড়িতে বিশাল নারী সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বনির্ভর বাজার মাঠে সকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে সহ¯্রাধিক নারী অংশগ্রহণ করেছেন।
‘আমরা করবো জয়’ এই আন্তর্জাতিক গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সঞ্চালনা করেন দপ্তর সম্পাদক মিনাকি চাকমা।
সমাবেশ শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক জুঁই চাকমা। শোক প্রস্তাবের পর দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য মন্টি চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটলে বরাবরই সত্যকে আড়াল করা হয়। আপনারা নিশ্চয় জানেন, উ¤্রাসিং মারমা, থুই¤্রাসিং মারমা, সবিতা চাকমা ও ইতি চাকমা হত্যাসহ আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তি হয়নি। কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার আমরা এখনো পাইনি।
তিনি বলেন, নারীদের পরিচয় কেবল একজন স্ত্রী, গৃহিনী, মেয়ে হিসেবে নয়, নারীদের পরিচয় হতে হবে একজন সংগ্রামী হিসেবে। নারীদেরকে নিজেদের অধিকারের জন্য যেমনি সংগ্রাম করতে হবে তেমনি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা বলেন, আমাদের উদ্বেগ উঠকন্ঠার সীমা নেই। তনু, তার পর ইতি এভাবে নারীরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
আমরা বলে আসছি, কল্পনা চাকমা দেশের নেত্রী, তার অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা হয়নি। তিনি বলেন, এই বিচার হলে সোহাগি জাহান তনু, ইতি হত্যার শিকার হতো না। বাংলাদেশে ১ লাখ মুক্তিযোদ্ধা থাকলে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাও থাকে আমরাও সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। তাহলে আমরা কেন ভূমি হারাই, কেন আমাদেরকে বাঙালি বানানো হয়? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য কওে তিনি বলেন, আমরা কেন খাগড়াছড়িতে সমাবেশ করতে পারি না। এটা কিসের গণতন্ত্র ?
তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের নারীদের গ্রামে গ্রামে আত্মরক্ষা কমিটি করতে হবে। ধর্ষণ হত্যা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের কেউই দমিয়ে রাখতে পারে না। তিনি পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
সমাবেশে বক্তারা সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমা হত্যার ঘটনাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘটিত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ‘১১ নির্দেশনা’ ও ‘অপারেশন উত্তরণ’ প্রত্যাহারসহ ৭ দফা দাবি সম্বলিত ৫ সংগঠনের (হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পা. চ. নারী সংঘ, নারী আত্মরক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি) একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ঘোষণাপত্রে আলুটিলায় ট্রাক চাপায় নিহতদের স্মরণে আগামী ১২ মার্চ খাগড়াছড়ির য়ংড বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রদীপ প্রজ্জ্বালন ও আগামী ১৫ মার্চ ইতি চাকমা’র হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবিতে ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশ শেষে স্বনির্ভর মাঠ থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি নারানহিয়া, উপজেলা, কলেজ গেট হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর মাঠে এসে শেষ হয়।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি।