আলীকদমে লাইসেন্সবিহীন করাত-কল গিলে খাচ্ছে সবুজ বনাঞ্চল

416

॥ আলীকদম প্রতিনিধি ॥

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ‘করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২’ না মেনে বিনা লাইসেন্সে ৬টি করাত-কলে দিনে-রাতে শত শত ফুট কাঠ চিরাই হচ্ছে। ‘করাত-কল স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পালনীয় শর্তাদি’র কোনটির তোয়াক্কা করছেনা করাত-কল পরিচালনাকারীরা।

জানা গেছে, করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ এর ৭ ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত ও অন্য যে কোন ধরণের সরকারী বনভূমি ও আন্তর্জাতিক স্থল সীমানার ১০ কিলোমিটার এর মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যায় না। অথচ আলীকদম উপজেলার লাইসেন্সবিহীন করাত-কলসমুহ সরকারী বনভূমির একেবারে কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে। যা ১০ কিলোমিটারের কম।

স্থানীয় আলী আকবর নামের এক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগে জানা গেছে, ‘লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকলে প্রতিদিনই চিরাই হচ্ছে গড়ে ২ হাজার ঘনফুট চোরাইকাঠ। যার বেশীরভাগ কাঠ সংগ্রহ করা হয় সংরক্ষিত বনভূমি মাতামুহুরী রিজার্ভ থেকে। বিনা রাজস্বে অবৈধভাবে সংগৃহিত চিরাই কাঠ স্থানীয় ফার্নিচার দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় বন বিভাগ ও প্রশাসনের এ ব্যাপারে উদাসীন রয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, ‘ইতোপূর্বে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) করাত-কল বিধি অনুসরণ না করে করাত-কল স্থাপন করা হয়েছে মর্মে জেলা প্রশাসনকে পত্র দেন। জেলা প্রশাসন থেকে জারী করা এক পত্রে অবৈধ করাত-কলগুলো সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশের দেড়যুগ পরও করাত-কলগুলো অপসারণ হয়নি। বন্ধ হয়নি করাত-কলের ধ্বংসলীলা।

বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, মে ২৭, ২০১২ তারিখ প্রকাশিত ‘করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২’ এর ৭ ধারায় করাত-কল স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পালনীয় শর্তাদি হিসেবে বলা হয়েছে, ‘সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বন ভূমির সীমানা হইতে ন্যূনতম ১০(দশ) কিলোমিটারের মধ্যে এবং কোন সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিঘœ সৃষ্টি করে এইরূপ কোন স্থানের ন্যূনতম ২০০ (দুইশত) মিটার এর মধ্যে করাত-কল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।’

সরেজমিন দেখা গেছে, করাত-কল বিধি মালা ২০১২ এর ৭ নং ধারার পুরোপুরি লঙ্ঘন করে স্থাপিত ও পরিচালিত হচ্ছে বেশীরভাগ করাত-কল। করাত-কলের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে লামা বন বিভাগের আওতাধীন মাতামুহুরী রিজার্ভের। প্রতিটি করাত-কলে রাতদিন যেসব গাছ চিরাই হচ্ছে তার ৯০% ভাগ রিজার্ভ ফরেস্টের। করাত-কলে চিরাই করা গাছের সবটুকই উপজেলা শতাধিক ফার্নিচার দোকানে অবৈধভাবে ফার্নিচার তৈরীর কাজে হজম করা হয়।

এ ব্যাপারে লামা বিভাগের তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাত-কল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আলীকদমের সব ক’টি করাত-কল এই আইন না মেনে অতীতে স্থাপিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন চাইলে অভিযান হতে পরে।