স্টাফ রিপোর্ট- ৯ জানুয়ারী ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সাজেকের মাচালং বাজারটি গত ৫ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বয়কটের ডাক দিয়েছিল সাজেকে আধিপত্যে থাকা চুক্তি বিরোধী আঞ্চলীক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ। সেনাবাহিনীর বিরুদ্দ্যে অভিযোগ তুলে এর দুদিন পরেই শর্ত সাপেক্ষে মাচালং বাজার বয়কট শিথিল করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষে বলা হয়েছে, মাচালং বাজারে কোন বাঙালি ব্যবসায়ীর দোকান থেকে কোন উপজাতি ক্রেতা কিছু ক্রয় করতে পারবে না, বাঙালির মোটর সাইকেল, সিএনজি এবং বাঘাইহাট জীপ সমিতির গাড়ীতে কোন উপজাতি চলাচল করতে পারবে না। এছড়াও বাঘাইহাট ও গঙ্গারাম বাজরেও সন্ত্রাসীরা উপজাতিদের আসতে বাধা দেয়ার খবর পাওয় গেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মাচালং বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী উপজাতি হওয়ায় বয়কট করার দুদিন পরেই উপজাতী জনগণের কাছে এমন শর্ত জুড়ে দিয়ে বাজার বয়কট শিথিল করা হয় ।
এতে উপজাতীয়রা স্বজাতীয় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মালামাল ক্রয় করতে পারলেও যাতায়াত বিড়ম্বনা ও বাড়তি ভাড়ার ঝামেলয় চরম দূর্ভোগে পরেছেন সাজেকের উপজাতীয় জনগণ। ফলে ৫০টাকার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১৫০টাকায়। মিলছেনা পর্যাপ্ত যানবাহন। আতংকও রয়েছে উপজাতিদের মধ্যে। দূর্ভোগ লাঘব করতে বাঙালিদের গাড়িতে উঠতে গিয়ে যদি ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের হাতে ধারা পরেন তো; জীবনের সর্বনাস হবে।
একিটি অনলাইন মিডিয়ায়- নাম প্রকাশ না করার মর্তে সাজেকের শিজকমুখ এলাকার উপজাতি এক জুম চাষী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের দিয়ে রাজনীতি করছে বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী। আমরা সাজেকের জনগণ পাহাড়ী না বাঙ্গালী, তা কিছু বুঝিনা। আমরা সবাই শান্তিতে বসবাস করতে চাই। সরকার কি সন্ত্রাসীদের দমন করতে পারে না। সরকার ইচ্ছা করলে সাজেক অঞ্চল একদিনেই সন্ত্রাস মুক্ত করতে পারে। সন্ত্রাসীদের জন্য জীপ গাড়ীতে চড়তে না পারায় আজকে আমাকে ৫০টাকার ভাড়া মোটর সাইকেলে করে ১৫০টাকা দিয়ে যেতে হয়েছে মাচালং বাজারে। এভাবে আর কিছুদিন চললে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
বাঘাইহাট জীপ সমিতির পক্ষ থেকে জনানো হয়, সমিতির গাড়ীগুলো প্রতিদিনের মত বৃহঃস্পতিবার ও শুক্রবার মাচালং বাজারে হাটের দিন থাকায় সাজেক পর্যন্ত চলাচল করে। কিন্তু দুইদিন ধরে সমিতির গাড়ীতে কোন উপজাতি যাত্রী চলাচল করছে না। যার ফলে গাড়ীতে তেল খরচও উঠছেনা। এজন্যই শুক্রবার বিকাল থেকে সমিতির লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। যদি যাত্রী চলাচল করতে চায় তা হলে গাড়ী চালবে।
এবিষয়ে নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়, এলাকায় কোন দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কোন রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করা হবে এবং এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে নিরাপত্তাবাহিনী বিশেষ ভাবে প্রস্তুত আছে।
অপর একিটি অনলাইন মিডিয়ার সংবাদে বলা হয়- ইউপিডিএফ’র বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিচালক জুয়েল চাকমা বলেঠছন, ইউপিডিএফ কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত নয়। স্থানীয়রাও এ ধরনের বজার বয়কটের ঘটনায় জড়িত নয়। বাজার বয়কটের ঘটনায় নিরাপত্তাবাহিনী জড়িত। তরাই এ ধরনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই চেক পোস্ট বসিয়ে বাজারে আগত সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা শুরু করলে তারা বাজারে না এসে ফিরে যেতে থাকে। এতে ইউপিডিএফ’র কোনো হাত নেই।
নতুন করে বাজার বয়কটের ঘটনার পর থেকে রাঙামাটির বাঙালি নেতৃবৃন্দ পাল্টা প্রতিক্রিয় হিসেবে উপজাতিদের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক নস্ট করার চিন্তা করছেন। তারা মনে করছে, উপজাতি ব্যবসায়ীরা যদি সন্ত্রাসীদের চাপে বাঙালিদের কাছে বেচা-কেনা বন্ধ রাখেন তা হলে বাঙালিরাও তেমনটি করবেন। কেননা, মাচালং বাজারটি উপজাতি অদ্ধ্যুসিত হলেও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির অধিকাংস বড় বাজারে বাঙালিদের অবস্থান সমান সমান। মুদি-মনোহরিসহ সব ধরনের পাইকরী ব্যবসায়ও বাঙালিদের অবস্থান উপজাতিদের চেয়ে বেশী। এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাণী সম্পদ, মৎস, কৃষি সম্পদ বেচা-কেনায়ও উপজাতিদের তুলনায় বাঙালি পাইপারদের অবস্থানই বেশী। এক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি বিরোধী গুটি কেয়েক সন্ত্রাসীদের দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে বাঙালিদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে একই ভাবে পাল্টা প্রতিরোধে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ এক ফ্যাইজ বুক স্টাটাজে পার্বত্য গণ পরিষদ চেয়ারম্যান, এডভোকেট পারভেজ তালুকদার বলেছেন, উপজাতি সন্ত্রাসীরা আবারও সাধারণ বাঙালি ও উপজাতীয় জনগণকে কষ্ট দেয়ার জন্য রাঙামাটির বাঘাইছড়ী উপজেলার বাঘাইহাটসহ তিনটি বাজার বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এখন থেকে বাঙালি ব্যবসায়ীদেরও উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের কাছে কোন ধরণের পণ্য বিক্রি, সেবা প্রদান না করার জন্য আহবান জানান তিনি।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।