ইউপিডিএফ সমর্থিত নারী কর্মসূচি পন্ড ব্যানার প্লাকার্ড কেড়ে নিল পিসিপি

997

updf-2

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥ পিসিপি’র আক্রমণে ইউপিডিএফ সমর্থিত নারীদের অবস্থান কর্মসূচি পন্ড হয়ে গেছে।  মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে আসে ইউপিডিএফ সমর্থিত চার নারী সংগঠন। কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনায় দেয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রত্যাখান করে বিষয়টি পুণঃতদন্তের দাবিতে এই কর্মসূচি দেয় তারা। কর্মসূচি পালনের শুরুতেই জেএসএস ও পিসিপির কিছু নেতৃবৃন্দ কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করে নারী নেত্রীদের কাছ থেকে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নিয়ে তাদের তাড়িয়ে দিলে কর্মসূচি ভন্ডুল হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন এবং কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু করে ইউপিডিএফ সমর্থিত চার নারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, সাজেক নারী সমাজ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

rangamati

সমাবেশে দুই শতাধিক নারী অংশগ্রহণের জন্য জমায়েত হয়। সমাবেশের শুরুতেই আকস্মিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহযোগি সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও যুব সমিতির কিছু নেতা এসে নারীনেত্রীদের কাছ থেকে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড কেড়ে নেয় এবং অংশহগ্রহণকারি নারীদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এসময় গটনাস্থলে ভিতীকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তটস্থ হয়ে পড়ে পথচারীরা। পিসিপি নেতারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে মেয়েদের কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। আকস্মিক ঘটনায় হতবিহ্বল নারীরা দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এসময় তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর সভাপতি নিরূপা চাকমা অভিযোগ করেছেন, পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক বাচ্চু এবং জুয়েল চাকমার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে নারীদের উপর হামলা চালিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তারা প্রকৃতভাবে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার বিচার চায়না বরং শাসকগোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। তিনি বলেন, আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অবাক হচ্ছি, এই ছোট ছোট ছেলেরা কিভাবে মুরুব্বি নারীদের হেনস্থা করতে পারে ? এটা কি ধরণের মানসিকতা ?

updf-ranagamati

এবিষয়ে পিসিপির রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক রিন্টু চাকমা জানিয়েছেন, তারা আমাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করেই রাঙামাটিতে কর্মসূচি পালন করতে এসেছে। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি ব্যবস্থা নিতে। এ বিষয়ে যুব সংহতি সমিতির সভাপতি টোয়েন চাকমা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে অবৈধ ভাবে এ সমাবেশ করছে।

তবে জেএসএস’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজিব চাকমা জানান, এ ঘটনা ইউডিএফের একটি সাজানো নাটক। রাঙামাটি শহরে ইউডিএফের কোন অস্তিত্ব নেই।

ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাইকেল চাকমা জানান, কল্পনা চাকমার অপহরণের তদন্ত কর্মকর্তার প্রহসনমূলক রির্পোটের প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকার রাখে অত্র অঞ্চলের পাহাড়ি জনগণ। জেএসএস’র এ ধরণের সমাবেশে হস্তক্ষেপ করা গণতান্ত্রিক নিয়মে পড়ে না। এ ঘটনার জন্য আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রাঙামাটি কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদ জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ইউপিডিএফ সমর্থিত নারী সংগঠনের কর্মসূচীতে জেএসএস এর লোকজন হামলা চালিয়েছে শুনে আমি ফোর্স পাঠাই, কিন্তু ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ওরা চলে গেছে। ফলে আমরা কিছুই জানতে পারিনি, কেউ কোন অভিযোগও দেয়নি।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর মধ্যে আন্তঃ শান্তিচুক্তি চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই কর্মসূচি পন্ড হওয়ার বিষয়টি পার্বত্য রাজনীতিকে কোন পথে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পাহাড়ি সমাজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা।