ইলিশের উৎপাদন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

191

ঢাকা, ৫ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার- ঢাকা ব্যুরো অফিস, দৈনিক রাঙামাটি।

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : ইলিশের উৎপাদন যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। আজ বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োফজিত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২৩ উপলক্ষ্যে ‘ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রমের প্রভাব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, একটি ইলিশের জন্য তার বর্ণাঢ্য জীবনচক্র, বৈশিষ্ট্য, চলাচল, অনুকূল পরিবেশ, নিরাপদ আশ্রয় এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইলিশের প্রাকৃতিক খাবারের মান কতটা কমে যাচ্ছে, জলবায়ুর প্রভাবে ইলিশের উৎপাদন কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকার কাজ করবে। যাতে ইলিশের উৎপাদন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মা ইলিশ সংরক্ষণ, জাটকা সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম সংরক্ষণসহ ইলিশের উৎপাদন যাতে কেউ কোনভাবে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সে জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ সবখানে নদীর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে যে নিরাপদ জায়গায় ইলিশ মাছ ডিম দেবে, যেখানে বাচ্চা হবে সে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যানবাহনের পোড়া তেল-মবিল, শিল্প বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে দূষণের ভয়ঙ্কর প্রভাবে মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন, এখন মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন অনেক সচেতন। আনন্দমুখরভাবে তারা জাটকা সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করছে। তবুও কিছু কিছু জায়গায় কিছু দুর্বৃত্ত জাটকা নিধন করে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মোবাইল কোর্ট, অভিযান পরিচালনা, জেল-জরিমানাসহ বিভিন্নভাবে জাটকা নিধন বন্ধ করার জন্য কাজ চলছে।

ইলিশের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত ব্যাপক উল্লেখ করে এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইলিশ সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার অন্যতম একটি খাত। বিশ্বের সর্বোচ্চ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। ইলিশ বাঙালির কাছে সবচেয়ে সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় মাছ। ইলিশ আহরণ, বিপণনসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা অনেক। এ মানুষগুলোর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হচ্ছে। কাজেই এ মাছ আমাদের ধরে রাখতে হবে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, দেশের মৎস্য খাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মৎস্য বিজ্ঞানী-কর্মকর্তা, মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং মৎস্য গবেষণার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের সম্মিলিত কৃতিত্বেই মৎস্য খাতে এ অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। সরকার এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন অভয়াশ্রম তৈরি, প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। বলেশ্বর নদীতে ইলিশের নতুন প্রজননক্ষেত্র ঘোষণা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেখানেই মাছ উৎপাদনের জন্য নিরাপদ আশ্রয় দরকার সেখানেই অভয়াশ্রম তৈরি করা হবে। ইলিশসহ সবধরণের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার অভয়াশ্রম তৈরি করতে আগ্রহী এবং সেটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্য খাতের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তাই করতে বলেছেন। তিনি বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। তিনি মৎস্য গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি করে দিয়েছেন। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম। কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই-এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

বার্তা প্রেরক-মো. ইফতেখার হোসেন
জনসংযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

আপলোড ও সম্পাদনা, শামীমুল আহসান
ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি