এবার বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণের চমক দেখিয়েছে বান্দরবানের এক ঠিকাদার। এই প্রকৌশল দক্ষতায় বান্দরবানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, আর শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সরকারি মহিলা কলেজের একাডেমীক ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশের ব্যবহার করার বাস্তব চিত্র ক্যামেরায় বন্দী করেন এই প্রতিবেদক নিজে।
বুধবার বিকেলে বাঁশ ব্যবহার করে ঢালাই করার সময় ছবিটি তোলা হয়। লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঢালাই করার বিষয়টি প্রাক্কলনে উল্লেখ ছিল কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কারণ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন লাপাত্তা হয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মানার্ধীন বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের একাডেমীক ভবন সম্প্রসারণের এই কাজে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। তবে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি করা হচ্ছে তা তাৎক্ষণিকভাবে কেউ জানাতে পারেনি।
বুধবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নির্মাণ শ্রমিকরা তাড়াহুড়া করে একাডেমী ভবনের তৃতীয় তলার ড্রপ ওয়ালে ঢালাইয়ের কাজ করছেন। এসময় বাস্তবে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করার নজির পাওয়া গেছে।
এর আগে বাঁশ দিয়ে কলেজের ঢালাই চলছে এমন খবর চাউর হওয়ার পর ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের ফোন করে জানায়। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে কর্মরত রাজমিস্ত্রী আলী হোসেনকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জানায় সিমেন্ট ধরানোর জন্য বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিস্ত্রি আলী হোসেন সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, ‘ঠিকাদার যেভাবে বলেছে আমরা সেইভাবে কাজ করছি’। ‘ঠিকাদার বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করতে বলেছে তাই লাগানো হচ্ছে। এতে আমার দোষ কি?’
কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে আলী হোসেন কাজ করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আলী হোসেন জানায়, জনৈক আঞ্জুমিয়া কলেজ ভবনের কাজটি উপ-ঠিকাদার হিসেবে চুক্তি নিয়েছে।
তিনি তার অধীনেই কাজ করছেন। সাব ঠিকাদার আঞ্জুমিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যপারে কিছু জানি না। আমি বেশ কয়েকদিন ধরে কাজের বাইরে আছি। কাজের মূল ঠিকাদার হলো উজ্জ্বল কান্তি দাশ ও তাপন কান্তি দাশ। তারাই কাজটি করাচ্ছেন। তবে সে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানাতে পারেনি।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানান, কাজটির ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় শুধু ড্রপ ওয়াল নয় ভবনটির ছাদেও কিছু কিছু বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। রাজমিস্ত্রির কাছ থেকে জানা গেলো ভবনের ছাদের কাজ জুন মাসের আগেই শেষ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঠিকাদারগন জানিয়েছেন, বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের একাডেমী ভবনের তৃতীয় তলা সম্প্রসারণের কাজটি কার্যাদেশ দেওয়ার পূর্বে যথানিয়মে টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। সমঝোতার মাধ্যমে কাগজপত্র ঠিক করে এই কাজটি প্রদান করা হয়। কাগজপত্র যাচাই করা হলে যার সত্যতা পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ বড়–য়ার সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, এই কাজে আমাকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। কত টাকার কাজ, কি ধরণের কাজ হবে। আমাকে কোনো কিছুই জানায়নি ঠিকাদারেরা। কাজ কি ধরণের হচ্ছে তাই বলতে পারবো না।
লোহার বদলে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহারের বিষয়ে ঠিকাদার উজ্জ্বল দাশ ও তাপস কান্তি দাশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, আমরা অবগত নই, সরেজমিনে দেখে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবো।
তারা বলেন, রাজমিস্ত্রি লোহার পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারছি। বাঁশ ব্যবহারের বিষয়ে তারা জানায় প্রাক্কলনে এমনা কিছু ধরা নেই। তাদের মতে রাজমিস্ত্রি নিজের সুবিধার জন্য এমনটি করে থাকতে পারে। তাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবানের ইউনিট অফিসার প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কলেজ ভবন নির্মাণ কাজে লোহার পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এই অনিয়ম জানান সাথে সাথে আমরা কাজটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ফাইল দেখে জানাতে পারবো। এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না।