এমআর ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় চরমপন্থীদের হাতে নিহত সাংবাদিক নহর আলীর ছেলে রিপনের সিঙ্গাপুর যাত্রা : একজন কিরণের মানব উন্নয়ন সেবা

638
ছবি- শামীমুল আহসান
ছবি- শামীমুল আহসান

ঢাকা ব্যুরো অফিস, ১০ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : চরমপন্থীদের হাতে খুলনার ডুমুরিয়ায় নিহত সাংবাদিক নহর আলী শেখের ছেলে রিকশা চালক মো. আছাদুজ্জামার রিপন শেখ সাংবাদিকদের উদ্যোগে সিঙ্গাপুরে হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহছান বুলবুলের প্রচেষ্টায় ‘মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’র কর্ণধার, ডিবেট ফর ডেমক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিজস্ব খরচে তাকে এ সুযোগ করে দেন।

আজ ১০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে সাংবাদিক নেতাদের উপস্থিতিতে অনাড়ম্বড় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মো. আছাদুজ্জামার রিপন শেখের হাতে সিঙ্গাপুরে যাবার পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট হস্থান্তর করা হয়। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রবাসী কল্যাণ সচিব ইফতেখার হায়দার ও মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সিইও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ও নহর আলীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিল।

২০০০ সালের ২১ এপ্রিল খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অণির্বাণ পত্রিকার সাংবাদিক ডুমুরিয়ার নহর আলী শেখ চরমপন্থীদের হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। নহর আলী নিহত হওয়ার পর তাঁর পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। নহর আলীর স্ত্রী আসমানী বেগম ছেলে আছাদুজ্জামান রিপন, মেহেদী হাসান রানা, মেয়ে রেহানা পারভীন ও হীরা খাতুনকে  নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন। এমতাবস্থায় বড় ছেলে রিপন মা এবং ছোট ভাইবোনের আহার জোটাতে ঢাকা শহরে রিকসা চালানো শুরু করেন। পুর্বে খুলনায় স্বপ্ন ভঙ্গে বেদনায় গামছা দিয়ে মুখ ঠেকে রিকসা চালাতে গিয়ে পরিচিত জনের সামনে পড়ার ভয়ে ঢাকায় তার রিকসা চালানো শুরু। কিন্তু ভালো আয় রোজগার না হওয়ায় ২০১৩ সালে ঢাকায় এসে ফের রিকশা চালানো শুরু করার পরেও একা মা ও ভাইবোনদের সংসার চালাতে পারত না রিপন।

একদিন ঢাকায় সমকালের সাংবাদিক হাসান তাঁর রিকশার যাত্রী হলে কথা কথায় তাঁর সাথে পরিচয় হয়। সাংবাদিকের সন্তান রিপন হাসানকে তাঁর সাংবাদিক পিতার হত্যাকান্ড, পরিবারের আর্থিক অনটন এবং তার রিকশা চালানোর কাহিনী তিনি খুলে বলেন। এরপর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে  সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল রিপনের একটি চাকরির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রদ্ধাভাজন সংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সিইও, লেবার মাইগ্রেশন এক্সপার্ট হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ তাকে সিঙ্গাপুরে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সিইও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বিনা খরচে সিঙ্গাপুরে হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে রিপনের একটি চাকরির ব্যবস্থা করেন। এর আগে সিঙ্গাপুরে গমনের নিমিত্ত্বে তাঁকে সিঙ্গাপুর সরকারের স্কিল সার্টিফাইড কোর্সে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করানো হয়। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের এপ্রসঙ্গে বলেন, একটি পরিবারকে বাঁচাতে নিহত সাংবাদিকের সন্তান রিপন শুধুমাত্র রিকসা চালিয়ে তার পরিবারের  অসহায়ত্বের কথা সমাজের কাছে তুলে ধরেন। ফলে তার নিহত পিতার সহকর্মী সাংবাদিকরা একটি সাংবাদিক পরিবারকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি তাঁর সারথি হয়েছেন মাত্র। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এভাবেই সবাইকে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি অনুরোধ করেন, যারা জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত তারা যেনো প্রতিবছর অন্তত পক্ষে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ ধরনের উদ্যোগে শামিল হয়ে বিনা মাইগ্রেশন খরচে অন্ততপক্ষে  সারা বছরের প্রেরণকৃত কর্মীর ১ ভাগ কর্মী বিনা খরচে বিদেশে প্রেরণ করেন।

রিপনের মা আসমানী বেগম বলেছেন, তাঁর সন্তান সিঙ্গাপুর যাবে- এটি কখনই ভাবেননি। শুধু সাংবাদিকদের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি সাবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
   
সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধা