রাঙামাটি জেলার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান এশিয়া বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিল রক্ষায় মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সর্বস্তরের মানুষ।
এই কর্মসূচিতে কেপিএমের সর্বস্তরের শ্রমিক কর্মচারি, এলাবাসী, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনের পাশাপাশি শ্রমিক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার কাপ্তাই উপজেলা সদর বরইছড়িতে এই মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করা হয়। কর্মসূচিতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ মত প্রকাশ করেছেন যে, নানা কারণে বর্তমানে এই মিল আর্থিক অনটনে পড়ে সঙ্কটাপন্ন সময় পার করছে। আর সঙ্কট সময়কে পুঁজি করে একটি মহল প্রসিদ্ধ এই মিল বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। কেপিএম যাতে বন্ধ না হয় সে লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদার। শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেপিএম বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী, কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের সাধারন সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মুক্তার, কেপিএম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি তৌহিদ আল মাহবুব চৌধুরী, ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য থোয়াইচং মারমা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুইচাইন চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মফিজুল হক ও শ্রমিক নেতা মোঃ হানিফ।
দীপংকর তালুকদার বলেন, কর্ণফুলী পেপার মিলের নামের সাথে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নাম জড়িয়ে আছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছিলেন তাতে কর্ণফুলী পেপার মিলের নামও উল্লেখ ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে কেপিএম উৎপাদিত কাগজ ছিল প্রধান ও একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম।
টানা ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদনে থেকে কেপিএম আজ জর্জরিত অবস্থায় পড়েছে। কলকবজা গুলো নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যেও কেপিএম উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। টেক্স হিসেবে কেপিএম প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সরকারকে কর দিচ্ছে। কেপিএমকে উপলক্ষ করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধীক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সেই কেপিএম আজ আর্থিক অনটনে পড়ে লোকসানী প্রতিষ্ঠানের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আর এই সুযোগে মহল বিশেষ কেপিএম বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে।
দীপংকর তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক বান্ধব সরকার প্রধান হিসেবে ইতিমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন। শেখ হাসিনা যতদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন ততদিন কোন অবস্থাতেই কেপিএম বন্ধ হবেনা এটা আমরা জোর গলায় বলতে পারি। তবে কেপিএমকে টেনে তুলতে হলে অর্থ বরাদ্ধ দিতে হবে। আপাতত ৫শ কোটি টাকার একটি তহবিল পেলে কেপিএম আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে অন্যতম শিল্প কারখানা হলো কেপিএম। এই কারখানা বন্ধের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তিনি যে কোন পদক্ষেপ নিতে দৃঢ় অঙ্গীকার করেন।
কেপিএম বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী বলেন, কেপিএম এখনো সচল থাকায় স্বল্প মূল্যে দেশে কাগজ পাওয়া যাচ্ছে। যদি কেপিএম বন্ধ হয়ে যায় তখন কাগজের মূল্য হবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাছাড়া বর্তমানে পাহাড়ে বাঙ্গালীদের যে সহঅবস্থান বিরাজ করছে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কেপিএম বাঁচাকে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে পার্বত্যাঞ্চলের কাঁচামালের উপর নির্ভর করে কর্ণফুলী কাগজ কল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে এ সংখ্যা ১১শ’তে নেমে এসেছে।