॥ কাপ্তাই প্রতিনিধি ॥
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের দুর্গম একটি পাহাড়ী এলাকা হচ্ছে পাগলী উপর পাড়া। যেই পাড়াতে যেতে হলে বড়ইছড়ি-ঘাগড়া সড়কের বটতলী হতে দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট পাহাড়ি পথ এবং ছড়া পাড় হয়ে পায়ে হেঁটে এই পাড়ায় যেতে হয়।
এই পাড়াটিতে পাহাড়ের মাঝখানে মাঝখানে প্রায় ৪০টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের বসবাস করে। কিন্তু খাওয়ার পানির অবর্ণনীয় কষ্ট তাদের কুঁড়ে খায় সারাবছর। পাহাড়ের গাঁ বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ঘামা পানি ঘন্টার পর ঘন্টা বোতলে জমিয়ে দূর পাহাড়ে বয়ে নিয়ে যায় এলাকার বাসিন্দারা। ঐ এলাকায় অবস্থিত একটি মাত্র পানির হাউস যেটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে ছিল, সেটা হতে এক বোতল পানি নিতে এলাকাবাসীকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ঐ স্থান থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে ফকির মুরং ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে এলাকার মানুষগুলের দুর্ভোগের এই দৃশ্য দেখতে পান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান। সেইদিন উপস্থিত হেডম্যান, কার্বারি,
মেম্বার, স্থানীয় জনসাধারণ সবাই একটা দাবী রেখেছিলো যে এই পানি সংরক্ষণ করতে কোনো ব্যবস্থা করে দেওয়ার। সেদিন তাদের কাপ্তাই ইউএনও কথা দিয়েছিলেন যে এই কষ্ট লাঘবে তিনি কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন।
অবশেষে সরকারের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় দুই মাসের মধ্যে ঐ এলাকায় পানির সংরক্ষণাগার তৈরি করে ট্যাপসহ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ফোঁটা পানির অপেক্ষা না করে হাউস থেকে সহজেই পানি সংগ্রহ করছে এলাকাবাসী। সময় ও বাঁচে, এখন কষ্টও লাঘব হলো। এখন তাদের খুশির সীমা নেই।
গত সোমবার কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান সরেজমিন ঐ এলাকায় গিয়ে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এসময় কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, সমাজ সেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, সহকারী তথ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, তথ্য সেবা কর্মকর্তা তাহমিনা সুলতানা, ইউপি সদস্য তপন তঞ্চঙ্গ্যা, স্থানীয় পাড়ার কার্বারী রঞ্জিত কার্বারী উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, আমি গত সেপ্টেম্বর মাসে ঐ এলাকায় গিয়ে দেখি পাগলি উপরের পাড়ার লোকজন পানি নিতে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন। এক বোতল পানি নিতে তাদের এক ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। তাই তাদের কথা দিয়েছিলাম, পানির হাউসটা সংস্থার করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমাধান করবো। এটা করতে পেরে নিজের কাছে খ্বু আনন্দ লাগছে।