॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারি দপ্তরে জাতির পিতার ছবিসহ প্রধানমন্ত্রীর ছবি যথাযথভাবে না টানানোসহ এই গুরুত্বপূর্ণ ছবি দু’টি অনেকটা অবমাননাকর অবস্থায় অবহেলায় টানিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পর্যায়ের এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও কর্মকর্তাকে তার অফিস কক্ষে পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসের এককোনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। উভয় ছবির উপরে চুনের রং লেগে থাকার পাশাপাশি ধূলোবালি মাখা অবস্থায় রয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার সময় প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে সরেজমিনে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার সময় প্রকল্প কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী সাহা ওই অফিসে ছিলেন না। জানা গেলো তিনি সেদিন দিনভরই অফিসমুখো হননি। তার অফিসের লোকজনই জানালেন তিনি প্রায় সময়ই অফিস করেন না। অফিসে কর্মরত কার্যসহকারির কাছে সংবিধিবদ্ধ ছবির এই দুরাবস্থার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি এই ব্যাপারে কোনো মত প্রকাশ করতে রাজি হননি।
বিধি অনুযায়ী দেশের সকল সরকারি, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক।
সংবিধিবদ্ধ নির্দেশনা অনুযায়ী সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায়, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা কেন্দ্র ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি যথাযথ মর্যাদায় টানানোর কথা থাকলেও রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে চুন মাখা অবস্থায়।
এ সময় পিআইও’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই ধরনের কোনো ঘটনা-ই ঘটে নাই। এছাড়া উপজেলায় আরো ২৬টি অফিস রয়েছে সেগুলোতে কেন গেলেন না বলেই সুপ্তশ্রী সাহা রেগে যান।
প্রতিবেদক নিজেসহ আরো কয়েকজন সংবাদকর্মী তার অফিসে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার কথা জানালে প্রকল্প কর্মকর্তা জানান, অফিসে রংয়ের কাজ চলছে তাই এমনটি হয়েছে। কাজ চললে ছবিগুলো নামিয়ে বা অন্যত্র সরিয়ে রাখলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন প্রকল্প কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী সাহা।
এদিকে বিষয়টি কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে নিজেই উক্ত অফিসের ৩/৪ বার গিয়েছি কিন্তু প্রকল্প কর্মকর্তাকে অফিসে পাইনি। একারনেই আমি অফিসের ভেতরে আর প্রবেশ করতাম না, তাই ছবির বিষয়টি সেভাবে চোখে পড়েনি।
এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে ইউএনও বলেন আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
এদিকে, বিষয়টিকে খুবই দুঃখজনক বলে অভিহিত করে রাঙামাটি জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার বলেছেন, এই ধরনের কাজ যদি হয়ে থাকে তাহলে এটি অবশ্যই অমর্যাদা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪-এর শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘জাতির পিতা’। এখানে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযতভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’
জানাগেছে, রাঙামাটির রাজস্থলী ও কাপ্তাই এই দুই উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন, সুপ্তশ্রী সাহাকে। পাশ্ববর্তী এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বাড়ি সুপ্তশ্রী সাহা’র। এই সুবাধে প্রায় সময় তিনি অফিসে অনুপস্থিত থেকে মূলতঃ নিজ বাড়িতেই থাকেন বলে তার অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে তিনি নিজেকে সরকারি দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার আস্থাভাজন পরিচয় দিয়ে অফিস দুটিতে অনিয়ম করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবত।