কাপ্তাইয়ে করোনা রোগীদের অকৃত্রিম বন্ধু সিএনজি চালক আব্দুল জলিল

461

|| অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই ||

করোনা রোগীদের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে প্রতিনিয়ত করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাইয়ে বসবাসরত মোহাম্মদ আবদুল জলিল। ফোন পেলেই নিজের ব্যাক্তিগত সিএনজি নিয়ে ছুটে যান করোনা রোগীর সেবা দিতে তাও আবার বিনা পারিশ্রমিকে। লকডাউনে গৃহবন্দী থাকা করোনা রোগীদের বাসায় পৌঁছে দেন খাদ্যদ্রব্য চিকিৎসা সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।

এছাড়া অনেক সময় রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হলে দ্রুত সিলিন্ডার সংগ্রহ করে পৌঁছে দেন তিনি। মোহাম্মদ আব্দুল জলিল পেশায় একজন সিএনজি চালক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ গাউসিয়া কমিটির কেপিআরসি শাখার প্রচার সম্পাদক। ইতমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে বাংলাদেশে করোনা রোগীদের পাশে থেকে এবং করোনা রোগীদের মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রমে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়ে মানবিক কাজ করে যাচ্ছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। তারই আদর্শে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল প্রতিনিয়ত বিপদে আপদে খবর পেলে ছুঁটে যান মানুষের সেবা দিতে।

কথা হয় জলিলের সাথে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কিছু করতে পারলেই তিনি সবচেয়ে বেশী আনন্দ পান। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো আমরা দেখেছি, করোনার ভয়ে রোগীদের কাছের মানুষরা পালিয়ে যাচ্ছে সেখানে কিছু কিছু ভালো মনের মানুষ যারা করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে ছুটে এসেছেন করোনা রোগীদের সেবা দিতে। তিনিও চান, করোনা রোগীদের তিনি নিরবিছিন্ন সেবা দিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, অনেক সময় সারাদিন পরিশ্রম করার পর যখন রাতে ঘুমোতে যান তখনও জরুরী সেবা দিতে ফোন আসলে তিনি সকল কষ্টকে ভুলে গিয়ে বের হয়ে যান মানুষকে সেবা দিতে। এরকম দিন-রাত তিনি মানুষের সেবায় কাজ করে পরিশেষে আনন্দ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিতে তিনি কোন পারিশ্রমিক নেননা। কেন নেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্থিক দিক বিবেচনা না করে তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করেই মানুষের জন্য কাজ করেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, মানুষের সেবা করলেই সবচেয়ে বেশী খুশী হন মহান সৃষ্টিকর্তা। আর সৃস্টিকর্তা খুশী হলেই সেটাই তাঁর বড় পাওয়া।

এছাড়া তিনি করোনা রোগীদের পাশে থেকে সবসময় মানবিক কাজ করে যাওয়ায় বাংলাদেশ গাউসিয়া কমিটি সহ এর প্রতিটি ইউনিটকে ধন্যবাদ জানান এবং করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। এদিকে কাপ্তাই বহুমুখী সমবায় সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম সিকদার জানান, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ কেপিআরসি শাখার প্রচার সম্পাদক জলিল খুবই আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। বিপদে আপদে সবসময় সে ছুটে আসে মানুষের সেবা দিতে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে জলিলের ভূমিকা ছিলো অন্যতম।

করোনা ভাইরাসের ভয়কে উপেক্ষা করে সে নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের এমন মানবিক কাজের জন্য তিনি গাউসিয়া কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁর এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক সেই কামনা করেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা ওমর ফারুক, মাইনুল হোসেন, সুমন দাশ রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম, সুধীর ধর সহ বেশ কয়েকজন এই প্রতিবেদককে বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যখন গৃহবন্দী হয়ে জীবন অতিবাহিত করছি তখন অনেক প্রতিবেশী করোনার ভয়ে খোঁজ খবর নেয়নি। সে মুহুর্তে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল ছিলো তাদের একমাত্র ভরসা। তাঁকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে সে ছুটে আসতো প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে।

এছাড়া কোভিট টেস্ট করার জন্য সে তাঁর সিএনজিতে করোনা রোগীদের যাত্রীসেবা দিতো। তারা সকলেই মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সাম্প্রতিক করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের মতো যেন সমাজের সহৃদয়বান সকল ব্যাক্তিরা বিপদে আপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় এটাই সকলের প্রত্যাশা।