কাপ্তাই হ্রদের ডুবোচরে আটকে পড়া ১৭৫ পর্যটককে উদ্ধার করলো পুলিশ

78

॥ আলমগীর মানিক ॥

পর্যটন শহর রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে কাপ্তাই হ্রদের ডুবো চরে আটকে পড়া ১৭৫ পর্যটককে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে কাপ্তাই হ্রদের মধ্যবর্তি স্থানে জেগে উঠা ডুবোচরে আটকে পড়ে পর্যটকদের সকলেই চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

আটকে পড়া পর্যটকরা কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে ৯৯৯ এ কল করলে বিষয়টি রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদকে অবহিত করা হয়। সাথে সাথেই রাত আটটার সময় রাঙামাটি সদর সার্কেলের এডিশনাল এসপি জাহিদুল ইসলাম ও কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুল আমিন এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নতুন আরেকটি লঞ্চের মাধ্যমে ১৭৫ জন পর্যটককে রাঙামাটি শহরে নিরাপদে সুস্থাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মো হানিফ বলেন, আমরা শিক্ষক পরিবার ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণে বের হই। গন্তব্য ছিল সুবলং। যাওয়ার পথে আমাদের লঞ্চ আটকা পড়ে। অনেক চেষ্ট করেও লঞ্চটি চর থেকে নামানো যায়নি। এক পর্যায়ে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পরে আমরা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশের স্মরণাপন্ন হই। পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে আমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এতে করে আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।

রাঙামাটি সদর সার্কেলের এডিশনাল এসপি জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৯৯৯ এর মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরপরই প্রথমে লোকেশন শনাক্ত করি আমরা। এরপর উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। যে লঞ্চটি ডুবোচরে আটকা পড়ে সেটি চর থেকে নামানো যায়নি। বিকল্প একটি লঞ্চে করে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কেন তাদের অন্য আরেকটি লঞ্চ দিয়ে আটকেপড়াদের রাঙামাটি শহরে ফিরিয়ে আনলো না, এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট্য কারো কোনো গাফিলতি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

এদিকে, পাহাড়ি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠির তৎপরতার কারনে অস্থিতিশীল পরিবেশের কারনে প্রচন্ড রকম ভয় পেয়েছিলেন মন্তব্য করে আটকে পড়া পর্যটকরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আমরা রাঙামাটি ঘুরে বিকেলেই চট্টগ্রামের উদ্যোশে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও হ্রদের মাঝখানে ডুবোচরে আটকে পরার পর আমরা বিকল্প একটি লঞ্চ দিয়ে আমাদের তীরে নিয়ে আসার আঁকুতি জানালেও সেটিতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের কর্ণপাত করেনি। ফলে রাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে।

আটকেপরা লঞ্চ এমএল আজমির এর মিস্ত্রি মিন্টু জানিয়েছেন, আটকে পড়ার পর আমরা আরেকটি লঞ্চ নিয়ে এসে সেটি দিয়ে চেষ্ঠা করেও আটকেপড়া লঞ্চকে উদ্ধার করতে পারিনি। কিন্তু উদ্ধার করতে আসা লঞ্চটি ছোট হওয়ায় সেটিতে পর্যটকরা না উঠায় আমরা নিয়ে আসতে পারিনি।

এদিকে প্রশাসনের নানামুখি তৎপরতার মধ্যেও রাঙামাটির পর্যটনখাতে ব্যবসা করা এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ি অত্রাঞ্চলে আগত পর্যটকদের সাথে অপেশাদারসুলভ আচরণ করছে প্রতিনিয়ত। বিগত জানুয়ারী মাসের ২০ তারিখেও কাপ্তাই হ্রদের ওপারে একটি রেষ্টুরেন্টে একদল পর্যটক খাবার খেতে গেলে রেষ্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে বচসায় লিপ্ত হয় এবং এক পর্যায়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।