কাপ্তাই হ্রদ এলাকার নিরাপত্তায় শীঘ্রই কাজ শুরু করছে নৌ-পুলিশ

651

P.1

আলমগীর মানিক- ২১ মার্চ ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : কাপ্তাই হ্রদের পানিপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাঙামাটি জেলায় নতুনভাবে কাজ শুরু করছে নৌ-পুলিশ। হ্রদে ভ্রমণ করা পর্যটক এবং মৎস্য আহরণকারী জেলেরাসহ এর পানিপথ ব্যবহার করে যাতায়াত করা পাঁচ উপজেলার নাগরিকদের জন্য বাড়তি ও নিবিড় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করছে রাঙামাটি জেলা পুলিশ। হ্রদের তিনটি স্থানে নৌ-পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে এপ্রিল মাস থেকে শুরু হবে নৌ-পুলিশের কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি নৌ-পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষ টিম রাঙামাটি সফর করে বিষয়টি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ শেষে সম্ভাব্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান দৈনিক রাঙামাটিকে জানান, সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদে নিরাপত্তা তদারকি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হ্রদের অভ্যন্তরের মৎস্য সম্পদ আহরণ কার্যক্রমের উপর বিশেষ নজর দেওয়াসহ হ্রদ এলাকায় সার্বিক পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর রাখবে নৌ-পুলিশ, হ্রদ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করবে তারা।

সফরকালে নৌ পুলিশের বিশেষ টিম তারা রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপারকে সাথে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যাতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় (সন্তু) লারমার সাথে সাক্ষাত করেন। বৈঠকে নৌপুলিশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন নৌ-পুলিশের ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মাহাবুবুর রহমান, রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।

পুলিশ সুপার জানান, মাত্র কয়েক বছর আগে গঠিত স্বতন্ত্র এই বাহিনী চট্টগ্রাম অঞ্চলে একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কাজ করবে। এ ছাড়া রাঙামাটিতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকবেন। হ্রদ ঘিরে থাকা নানিয়ারচর, লংগদু, ও সদর উপজেলাধীন বালুখালী এলাকায় তিনটি ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে এপ্রিল মাসেই কার্যক্রম শুরু করবে নৌ পুলিশ বাহিনী। মূলত বিষয়গুলো অবহিত করার জন্যই আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাত করা হয়। তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদে নৌ-পুলিশের কার্যক্রম পরিচালিত হবে জেনে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান খুশি হয়েছেন এবং তিনি এই কার্যক্রমের সফলতাও কামনা করেছেন।
পুলিশ সুপার আরো জানান, প্রাথমিকভাবে স্পিডবোট, দেশীয় ইঞ্জিন বোট ও রিভার বাইকসহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যকে নিয়ে কাজ শুরু করবে নৌ-পুলিশ। নদী পথ নিয়েই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বাহিনী কাজ শুরু করলে কাপ্তাই হ্রদের বিশাল নৌ-পথ নিরাপত্তার আওতায় চলে আসবে এবং অত্রাঞ্চলের ছোটোখাটো অপরাধগুলো কমে আসবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙামাটিসহ পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয় বলে নদী এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সেভাবে সময় দিতে পারে না থানা পুলিশ। তাই নদী পথের অপরাধীদের ধরতে এবং ব্যবস্থা নিতে এবার বিশালায়তনের কাপ্তাই হ্রদে নৌপুলিশর নিয়োগ করা হচ্ছে।

জানা যায়, বিগত ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে নৌ পুলিশ ইউনিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নৌ পুলিশের সদস্যরা নদী ও উপকূলীয় প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি জেলার কিছু অংশসহ সমগ্র রাঙামাটি জেলাজুড়ে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই হ্রদের অবস্থান। মিঠাপানির এই হ্রদটির আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮শ হেক্টর। বর্গমাইল হিসাবে এর আয়তন ২৫৬ বর্গমাইল, যা দেশের পুকুরগুলোর মোট আয়তনের ৩২ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। জলবিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে তৈরি হলেও মৎস্য উৎপাদন, দেশি-বিদেশি মুদ্রা উপার্জন, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে দেশের সামগ্রিক মৎস্যক্ষেত্রে কাপ্তাই লেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। একমাত্র কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য আহরনের মাধ্যমেই বছরে সরকার রাজস্ব আয় করে অন্তত ৯ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা থাকা কাপ্তাই হ্রদ আশাতীত রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে নজর কেড়েছে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের। বিশাল এই জল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অত্রাঞ্চলের বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নানাবিদ উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করছে বর্তমান সরকার।

পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান