কে হচ্ছেন রাঙ্গামাটির ১৮তম পৗর মেয়র

463

Rangamati-pic01

শামীমুল আহসান-  আজ রাঙ্গামাটি পৌরসভার ১৮তম নির্বাচন। সকাল ৮টার পর শুরু হয়ে থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। রাঙ্গামাটি পৌর সভার ৫৯ হাজার ভোটার গোপনে ব্যালট পেপারে সিল মেরে তাদের পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন। তবে জল্পনা-কল্পনার কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে মেয়র পদটি।

কে হচ্ছে রাঙ্গামাটি পৌরসভার ১৮তম মেয়র ? আকবর হোসেন চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ভূট্টো ? নাকি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা। আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এই তিন জনের নাম।

রাঙ্গামাটি পৌর সভার ৫৯ হাজার ভোটার। শেষ মুহুর্তে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে হয়তো ভুল করবে না পৌর এলাকার জনগন। কিন্তু রাজ নীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতির সমিকরণ নির্বচনকে কোন দিকে নিয়ে যায় তা বলা মুশকিল। কে যে জয়ের মালা পড়বেন সেই দিকে লক্ষ এখন পৌর বাসীর।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতিয় পার্টি, জামায়াত ও বাম রাজ নীতি ছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক সমিকরণ হচ্ছে- পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায় ভিত্তিক। তার মধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অবস্থান পার্বত্য অঞ্চলের কেন্দ্র বিন্দুতে। ফলে রাজ নীতিরও কেন্দ্র বিন্দু রাঙামাটি।

এখানে পাহাড়িদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা সহ বিভিন্ন স¤প্রদায়ের অবস্থান রাঙ্গামাটি শহরে। অপরদিকে বাঙালিদের মধ্যে হিন্দু, মুসলিম ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের অবস্থান। তার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। এখানে চট্টগ্রাম ও নন চট্টগ্রামের মানুষেরও অবস্থানগত একটি সমিকরণ রয়েছে। তাই ভোটের হিসাব অংকে মেলানো মুশকিল। হয়তে শেষ মুহুর্তে এসে অংক নাও মিলতে পারে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম রাঙ্গামাটির প্রবীন রাজনীতিবিদদের বরাত দিয়ে এভাবে হিসাব মেলাতে চান যে- রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৫৯ হাজার ভোটারের মধ্যে ১৭ হাজার উপজাতীয় ভোটার, বাঙ্গালী ভোটার হচ্ছে ৪২ হাজার। ৪২ হাজার ভোটারের মধ্যে ৯ হাজারের মতো রয়েছে হিন্দু ভোটার, বড়–য়া রয়েছে ৪ হাজারের মতো। ২৯ হাজার ভোটার হচ্ছে মুসলিম তথা চট্টগ্রাম ও নন চট্টগ্রামের ভোটার। এই ২৯ হাজার ভোটের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের মতে বিএনপির নিজস্ব ভোট রয়েছে ১৭ হাজার।

অপর দিকে ১৭ হাজার উপজাতীয় ভোট শুধুই জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীর তা বলা যাচ্ছে না। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক ভোটার রয়েছেন। ১৭ হাজার ভোটের মধ্যে যদি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পক্ষে ভোট পড়ে তাহলে জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীর ভোট কমে যাবে। তাই যদি উপজাতীয় ভোটারের মধ্যে ৯০ শতাংশও ভোট পড়ে তাহলে জেএসএস সমর্থিত প্রার্থী ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা ভোট পাবে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার।

অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে সাইফুল ইসলাম চৌধুরী মেয়র হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল আলম রবি ও মাঠে কম যায় না। তাই বিএনপির ভোট ব্যাংকে হানা দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না রবিউল আলম রবি। মোট ভোটারের মধ্যে ১৭ হাজার বিএনপির ভোট হলেও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কে কতো ভোট পায় এই নিয়ে অংক মেলাতে পারছেনা কেউ।

অন্য দিকে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী। পাহাড়ি বাঙালি সকল স¤প্রদায়ের ভোট নিয়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন আকবর হোসেন চৌধুরী। আওয়ামীলীগের প্রচার প্রচারণা যেমন চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামীলীগও। হারানো সিট ফিরে পেতে এবং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আটঘাট বেধে নেমেছে আওয়ামীলীগের কর্মী সমথর্করা। যে যেখানে থাকুক না কেন; বিদ্রোহী প্রার্থীকে বসিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থানকে শক্ত করে নিয়েছে আকবর হোসেন চৌধুরী।

এদিকে সনাতন সম্প্রদায়ের ৯ হাজার ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ৪ হাজার ভোটের উপর নির্ভর করবে এবারের পৌরসভার নির্বাচনী ফলাফল। কোন প্রার্থী কতোটুকু মন জয় করতে পারলেন সেই হিসেবেই এই ভোটারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অতীতের সকল হিসাব মতে এই ভোটগুলোর বিশাল একটি অংশ যাবে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার পক্ষে। অপরদিকে বর্তমানে কিছু কিছু সনাতন স¤প্রদায়ের ছেলে বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে অবস্থান ও আওয়ামীলীগ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায় বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো এবং ডা. গঙ্গা মানিক চাকমার পক্ষে কিছু ভোট যাবে।

অপরদিকে দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায়, রাঙ্গামাটি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ঠেকাও এমন মনোভাব নিয়ে একটি গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যদি কোন ধরনের হিসাবে গড় মিল হয় তাহলে ভোটের হিসাব পাল্টে দিবে অপর দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষের লোকজন। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

পোস্ট- ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি