স্টাফ রিপোর্ট- ১৫ মার্চ ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: খাগড়াছড়িতে জুমচাষে বাধা দেয়ার ঘটনায় ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় এখন মুখোমুখি। ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ির ছাতিপাড়া এলাকায় জুমচাষে বাধা দিতে এসে ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজনের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষার ঘটনা ঘটেছে।
‘বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস) এবং ‘ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম (টিএসএফ)’ গণমাধ্যমে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে জেলার বেশ কয়েকটি দুর্গম এলাকায় বসবাসরত জুম নির্ভর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠিকে জুমচাষে বাধাদান এবং সশস্ত্র আক্রমণসহ হুমকি প্রদানের জন্য ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’র পরিচয়ধারী সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের দায়ী করেছে।
তবে ইউপিডিএফ’র পক্ষ থেকে এ অভিযোগকে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে অন্য কারো প্ররোচনায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিটিকেএস’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শাপলা ত্রিপুরা এবং টিএসএফ’র কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক দেবাশীষ ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ পরিচয়ে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা জেলার দুর্গম ছাতিপাড়া, গুইমারা পাড়া, রশিধন পাড়া, কলাবাগানপাড়া, পেতুক পাড়াসহ ত্রিপুরা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় জুমচাষ না করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় দপ্তরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিকার চাওয়া হলে একটি সমঝোতা বৈঠক করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই ১২ মার্চ সকাল ১১টার দিকে ছাতিপাড়ায় জনৈক রাজেস মারমা’র নেতৃত্বে ৭ সশস্ত্র ব্যক্তি গ্রামবাসীদের অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি প্রদান করে এবং গ্রামবাসীদের লক্ষ করে ফাঁকা গুলী বর্ষণ করে।
বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরাদেরকে শিক্ষা-অর্থনীতিসহ সার্বিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া উল্লেখ করে এ ধরনের হুমকি, আক্রমণ এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনগোষ্ঠির অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং সার্বিক একতাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়।
এদিকে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রচার সেলের প্রধান নিরন চাকমা জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম-প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্থায়িত্বশীল জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। কোথাও কাউকে জোরপূর্বক জুমচাষে বাধা বা গুলি বর্ষণের মতো ভয়ানক অপরাধের বিষয় তাদের জানা নেই।
গত রবিবার(১২ মার্চ) খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইচছড়ির ছাতিপাড়ায় জুম চাষে বাধা দিতে এসে গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) সন্ত্রাসীরা। এলাকাবাসী জানান, কয়েক দিন ধরে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) সন্ত্রাসীরা জুম চাষীদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ৭/৮ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী মাইচছড়ির ছাতিপাড়া এলাকায় এসে জুমিয়াদের অস্ত্রের মুখে জুম চাষ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে অনঢ় থাকলে শতাধিক গ্রামবাসী দা-কুড়াল নিয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, সন্ত্রাসীরা অন্তত ১০রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। পরে খবর পেয়ে মহালছড়ি জোনের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাইফেলের ১০রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে।
এদিকে গত সোমবার খাগড়াছড়ির মাইচছড়িতে চাঁদা আদায়কালে সাত রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি বিদেশী পিস্তলসহ যতীন ত্রিপুরা(৩২) নামে ইউপিডিএফ’র এক সন্ত্রাসীকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাইচছড়ি বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। সে থলিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য কালি বন্ধু ত্রিপুরার ছেলে।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানা গেছে, যতীন ত্রিপুরা দীর্ঘ দিন ধরে মাইচছড়ি বাজারে চাঁদা আদায় করে আসছিল। সে নিরাপত্তা বাহিনীর নজড়ে ছিল। সোমবার মাইচছড়ি বাজারে চাঁদা আদায় করতে আসলে তাকে সাত রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি চাইনিজ পিস্তলসহ চাঁদা আদায় কাজে ব্যবহৃত মটরসাইকেল আটক করা হয়।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি। সূত্র- অন্যমিডিয়া