॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
চাঁদার দাবিতে আগুন দিয়ে অটোরিক্সা জ¦ালিয়ে দেওয়ার মাত্র ৬দিন না পেরুতেই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙামাটিতে আবারো রাতের আধাঁরে আগুন দিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা জ¦ালিয়ে দিয়েছে যাত্রীবেশি উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে আটটার সময় রাঙামাটির ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের কুকিমারা আপাই মারমার আম বাগান সংলগ্ন এলাকায় যাত্রীবেশি পাহাড়ি যুবক এই ঘটনা ঘটায়। আগুনে চট্টগ্রাম থ-৭৪৯৯ এই নাম্বারের সিএনজি অটোরিক্সাটি সম্পূর্ন পুড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বড়ইছড়ি সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম। এরআগে চলতি মাসের গত ১০ তারিখ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার সময় একই কায়দায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের দেপ্পোছড়ি এলাকায় যাত্রীবাহি অটোরিক্সায় হামলা চালিয়ে চাঁদার টোকেন নাপেয়ে আগুন লাগিয়ে জ¦ালিয়ে দিয়েছে অটোরিক্সাটি।
বড়ইছড়ি সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম জানান, আমি ঘটনাটি জানার পর সমিতির লোকজনকে নিয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। এসময় সিএনজিটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তখন ঐ সিএনজিতে কোন চালক বা যাত্রীকে দেখতে পাই নাই। তবে নাম্বার দেখে আমরা জানতে পারি পুড়িয়ে যাওয়া গাড়ীটি রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান সমিতির মো: আলম প্রকাশ রকি ড্রাইভারের। তবে কে বা কারা সিএনজিটি পুড়িয়ে দিয়েছে সেটা জানি না।
এদিকে ঘটনার সংবাদ পেয়ে রাত ৮.৪৫ মিনিটে পুলিশ ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন কাপ্তাই থানার ওসি জসিম উদ্দিন। ওসি জানিয়েছেন, আমার আসার পরও তখন সিএনজি’টি জ্বলছিল। আমরা সিএনজিটির আগুন নেভাতে সক্ষম হই। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে যে, পাহাড়ের কোন একটা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই ঘটনা ঘটাতে পারে। সেই বিষয়ে তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো যাবে।
এদিকে, পুড়িয়ে দেওয়া সিএনজির চালক রকি জানান, সন্ধ্যায় লিচুবাগান হতে ২ জন পাহাড়ি যাত্রী আমাকে বড়ইছড়ি বাজার যাবার জন্য ঠিক করে। বড়ইছড়ি বাজারে যাওয়ার সাথে সাথে আমাকে পিছন হতে অস্ত্রধরে সামনে যেতে বলে। তারপর আমি বড়ইছড়ি-ঘাগড়া সড়ক ধরে গাড়িটা চালাতে থাকি। পরে তারা আমাকে কুকিমারার আগে থামতে বলে। সেখানে আরোও ৩জন উপজাতীয় যুবক উপস্থিত ছিল। তারা সকলে আমার মোবাইল, টাকা কেড়ে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে একটা পাহাড়ে নিয়ে যায়। তখন তারা নীচে নেমে এসে সিএনজি টা চালিয়ে নিয়ে যায়। পড়ে আমি পাহাড় হতে নেমে সড়কে একটা সিএনজি তে উঠে চালককে ঘটনাটি জানিয়ে তার সহায়তায় আমি লিচুবাগান চলে আসি। এসময় সিএনজি চালক রকিকে বেশ আতঙ্কগ্রস্থ অবস্থায় দেখাচ্ছিলো।
এদিকে কাপ্তাই থানা পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কেউ থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫শে জানুয়ারী এই দেপ্পোছড়ি এলাকায় কাঠবাহি চলন্ত ট্রাকে ব্রাশ ফায়ার করে অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। তারও আগে গত বছর ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আসামবস্তী কাপ্তাই সড়কের বড় আদমের তঞ্চঙ্গ্যাপাড়ায় জেএসএস এর সহকারী কমান্ডার বিপ্লব চাকমা এবং কালেক্টর রিটন চাকমার নেতৃত্বে আনুমানিক ১০ সদস্যের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদা পরিশোধ না করায় ০৬টি সিএনজি অটোরিকশা এবং ০১টি পাথর বোঝাই ট্রাক আটক করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর দুইটি টহল দল ঘটনাস্থলে গমন করে সিএনজি অটোরিক্সাগুলো উদ্ধার করে।
এরপর ১৬ই সেপ্টেম্বর রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে চাঁদার দাবিতে আরো একটি অটোরিক্সা আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিয়েছিলো সন্ত্রাসীরা। রাঙামাটি শহরের অদূরেই এই ধরনের সশস্ত্র তৎপরতায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় রাঙামাটির সর্বত্রই গাড়ি চালকদের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়তই।