চিকিৎসক শূন্য বরকল উপজেলা হাসপাতাল ৫ চিকিৎসকের কেউই কর্মস্থলে নেই

501


॥ বিহারী চাকমা ॥
রাঙামাটির বরকল উপাজেলার ১০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালের ৫জন চিকিৎকের কেউই কর্মস্থলে নেই। দুর্গম এই উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা সেবার এই প্রতিষ্ঠানে কোন চিকিৎসক না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার লোকজন।

প্রশিক্ষণ এবং মিটিংয়ের অজুহাতে উপজেলার নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তাররা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন মাসের পর মাস। আর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

এ নিয়ে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, হেডম্যান, কার্বারী ও স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। উপজেলার ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৪টি। এরমধ্যে কাগজ-কলমে ৫জন ডাক্তারকে কর্মরত দেখানো হলেও কর্মস্থলে নেই কোন ডাক্তার। ৯জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য রয়েছে।

কর্মরত দেখানো ৫জন চিকিৎসকের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুইমিপ্র“ রোয়াজা পুরো মাসের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। রোগী দেখার সময় সুযোগ তিনি পান না। মেডিকেল অফিসার ডাঃ ধীমান চৌধুরী সম্প্রতি অন্যত্র বদলী হয়ে চলে গেছেন।

ডাঃ মামুন রেজা গত কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কয়েকদিন আগে ডাঃ তারেক ভূইঁয়া জাহিন নামে এক ডাক্তার হাসপাতালে যোগদান করে সেদিনই প্রশিক্ষণে চলে যান। এর আগে ডাঃ শুভ্রসোম চাকমা পরীক্ষা দিতে চলে গেছেন।

ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের এই বেহাল দশাতে দেখার যেন কেউ নেই। সামান্য কোন অসুখ হলেই রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে নিু আয়ের মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ আছে উপজেলা হাসপাতালের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে নামেমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের জেলা সদরের হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এতে রোগীরা যেমনি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি হয়রানি ও আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ।

উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার উপেন্দ্র লাল চাকমা বলেন- প্রশিক্ষণও মিটিং থাকায় ডাক্তাররা কর্মস্থলে থাকতে পারেন না। আমাদেরই আন্তঃ বিভাগ ও বহিঃ বিভাগের রোগীদের দেখাশুনা করতে হয়। আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে ঝুকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারি না। তাই রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।

আইমাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অমর কুমার চাকমা জানান- গত ২৬ জানুয়ারী রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে কোন ডাক্তার নেই। একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আমাকে দেখার পর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে ষ্পীড বোট ভাড়া করে জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয়েছে কিন্তু একজন গরীব অসহায় রোগীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুইমিপ্র“ রোয়াজা কর্মস্থলে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- বর্তমানে চিকিৎসকরা কেউ প্রশিক্ষণে কেউ পরীক্ষা দিতে গেছেন। আবার কেউ বদলী হয়ে চলে গেছেন। তাছাড়া ১০টি চিকিৎসকের পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। আমাকে প্রায়ই সরকারী প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ে থাকতে হয়। এসব কারণে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকট দেখা দেয়। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এলে চিকিৎসক সংকট দুর করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন- বরকল উপজেলার একটি মাত্র হাসপাতালে ১৪ জন ডাক্তারের মধ্যে একজনও কর্মস্থলে না থাকা সেটা অত্যন্ত দূঃখজনক। যদি কোন প্রশিক্ষণ কিংবা মিটিং থাকে তাহলে হাসপাতাল শূন্য করে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়।

এদিকে বরকল উপজেলা হাসপাতালে কোন চিকিৎসক কর্মস্থলে নেই তা জানেন না ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন। বরকল উপজেলার ডাক্তারের শূন্যপদ নিয়েও তিনি কোনকিছুই জানাতে পারেননি। মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ সাবরিনা সুলতানা বলেন, বরকল উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নেই সেটা আমি জানি না। আমার জানামতে সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন। যদি না থাকে আমরা রিপোর্ট করবো।