চিত্রশিল্পী বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু নামে নানিয়ারচর সেতুর নামকরণ

98
মেহেদী ইমামঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, গায়ক ও সুরকার বাবু চুণীলাল দেওয়ানের নামে নামকরণ করা হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ নানিয়ারচর সেতুটির। গত ৩রা জানুয়ারি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ গোলাম জিলানী কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় নানিয়ারচর সেতুটি বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু নামে নামকরণের ফলক উন্মোচন করেন দীপংকর তালুকদার (এমপি)।
রোববার (১৫ই জানুয়ারি) সকালে বাগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কে অবস্থিত নানিয়ারচর সেতুটি “বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু” নামে ফলক উন্মোচন করেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৯৯নং আসনের সাংসদ দীপংকর তালুকদার।
এসময় নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, নানিয়ারচর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নুর জামাল হাওলাদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আক্তার, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ইলিপন চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদুল ইসলাম, নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ সুজন হালদার, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ সালেহ আল নূর, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান ইবনে হাসান, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদিব কান্তিসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও গগণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ফলক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দীপংকর তালুকদার বলেন, সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নানিয়ারচর সেতুটি বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু নামে নামকরণ করা হয়েছে। বাবু চুণীলাল দেওয়ান শুধু নানিয়ারচরেরই নয়, তিনি পার্বত্যাঞ্চলের একজন কির্তীমান চিত্রশিল্পী, গায়ক, সুরকার ও কবি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের অনুজ ছিলেন তিনি। অনেকেই বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফ নামে সেতুটি নামকরণ এর দাবি জানিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা হলে আমাদেরও ভাল লাগত। তবে পাহাড়ের গুণী শিল্পি ও কীর্তিমান এই ব্যক্তির নামে সেতুটি নামকরণ হওয়ায় আগামী প্রজন্ম এই শিল্পিকে স্বরণ রাখার সুযোগ পাবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে দীপংকর তালুকদার বলেন, বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কের চেঙ্গি নদির উপর এই সেতু নির্মাণ করার মূল উদ্দেশ্যই হলো এই সড়ক উন্নয়ন। সড়কের বাকি অংশটুকু উন্নয়ন না হলে এই সেতু নির্মাণ মূল্যহীন। সড়কের বাকি অংশটুকু নির্মাণমল্পে একনেকে প্রকল্পটি উত্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক এ অনুমোদন হলে সাজেক, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচর এলাকার সাধারণ জনগণ ব্যপকভাবে উপকৃত হবে।
এদিকে নানিয়ারচর সেতুটি বাবু চুণীলাল দেওয়ান নামে নামকরণ এর প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই স্থানীয় ভাবে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বহুল প্রত্যাশিত এই সেতুটি গত এক বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালী উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের আগ থেকেই এই এলাকার সাধারণ জনগণ সেতুটি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ নামে নামকরণ এর দাবি তোলে। অনেকেই চেঙ্গী সেতু নামে নামকরণ এর দাবি ও জানান। এনিয়ে মানববন্ধন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু হটাৎ বাবু চুণীলাল দেওয়ান নামে নামকরণ এর প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর শুরু হয় নানা গুঞ্জন।
অপরদিকে বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু নামে নামকরণ হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চুণীলাল দেওয়ানের নাতি বিপ্লব দেওয়ান।
এবিষয়ে তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সেতুটি বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু নামে নামকরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আমরা এতদিন আমাদের মুরুব্বিদের কাছ থেকে দাদার নাম ও কির্তী সম্পর্কে জেনেছি। সেতুটি বাবু চুণীলাল দেওয়ান সেতু নামে নামকরণ এর ফলে আগামী প্রজম্ম তার নাম স্বরণ রাখবে এবং শীল্পে তার অবদান সম্পর্কে জানবে।
তিনি আরো জানান, বাবু চুণীলাল দেওয়ান ১৯১১সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪সালে তিনি কলকাতা সরকারি আর্ট এন্ড ক্রাফট কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রাচ্য বিভাগে ডিপ্লোমা পাশ করেন। পার্বত্য এলাকায় একমাত্র তিনি ছিলেন, চিত্রশিল্পী, গায়ক, গীতিকার ও সুরকার। এছাড়াও তিনি নানিয়ারচর বাজার চৌধুরী ও ২টি মৌজার হেডম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, ৫০০মিটার দৈর্ঘ এই সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় সড়ক পথে রাঙামাটি জেলা সদর হতে সরাসরি নানিয়ারচরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলেও লংগদু এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারছে না এলাকার জনসাধারণ। এই সড়কটি উন্নত হলেই যাতায়াতের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা গড়ে উঠবে। ফলে স্থানীয় লোকজনের আর্থ-সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নসহ পার্বত্য এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র দ্রুত পাল্টে যাবে।