আলমগীর মানিক- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : বরকল উপজেলায় ভারত সীমান্তবর্তী হরিণা এলাকায় চোরা চালান রোধসহ সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার জের ধরে বাজার বয়কটের ঘটনায় রাঙামাটি জেলায় বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একটি পক্ষ নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টিকে তাদের জন্য হয়রানীমুলক বলে অভিযোগ এনে স্থানীয় বাজারগুলো বয়কটের ডাক দিয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বরকলে সাপ্তাহিক হাটের দিন বাজারে পাহাড়িদের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না বলে দাবি করেছে স্থানীয় সূত্রগুলো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট জনগণের সাথে কথা বলে জানা যায়, চোরাচালন রোধসহ সীমান্ত অপরাধ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিজিবি হরিনা এলাকায় সম্প্রতি দু’টি সার্চ লাইট স্থাপন করে এবং টহল ব্যবস্থা জোরদার করে। একইসাথে হরিণা ও বরকল চেকপোষ্ট দিয়ে চলাচল করা দেশীয় ইঞ্জিন বোটসহ যাত্রীবাহি যানবাহনগুলো নিয়মিত তল্লাসীর আওতায় আনে। এদিকে বিজিবির এই আকস্মিক কড়াকড়ির প্রেক্ষাপটে স্থানীয় অধিবাসিরা হয়রানির শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে হাট-বাজার বয়কটের ডাক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করে একটি পক্ষ। তবে বাজার বয়কটের এই ঘটনা নিয়ে পক্ষটি যেমন প্রকাশ্যে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করেনি, তেমনি বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হবার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্পষ্টভাবে স্বীকার করা হচ্ছে না। কিন্তু বুধবার বয়কট হয়েছে চারটি বাজার।
এ ব্যাপারে জানতে বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনি চাকমা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তার গোচরে নেই বলে দাবি করে বলেন, স্থানীয় সাংবাদিক আছে, তার কাছ থেকে জেনে নিন। আমি রাঙামাটিতে আছি; কিছুই জানিনা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিধান চাকমার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে ঘটনাস্থল বরকল ও ছোট হরিণা বাজারে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করে জানালেন, তাদের প্রকাশিত লিফলেটের ভাষার সাথে আমি নিজেও একমত।
এদিকে উপজেলার নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, আমার কাছে লিখিতভাবে কেউ কিছু জানায়নি বিধায় আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা। প্রশ্ন ওঠে- তাহলে দায়িত্ব প্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তার আসল দায়িত্বকি?
বিষয়টি নিয়ে বরকল বিজিবি জোনের দায়িত্বশীল সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই সীমান্তে চোরাচালান ও সীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু রাখার সুবিধার্থে উক্ত এলাকায় রাতের বেলা জ্বালাতে দুইটি উচ্চমানের সার্চ লাইট লাগানো হয় এতে করে পুরো এলাকাটি আলোকিত থাকে পুরো রাত। তাতে চোরাচালানিরা তাদের অপকর্ম করতে পারছে না বিধায় এখানকার একটি অসাধু চক্র অযথা হয়রানীর কথা বলে অভিযোগ তুলছে।
সূত্রটি জানান, এনিয়ে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, সেখানে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা পালন করছি। এতে করে আমাদের নিজেদের কোনো স্বার্থ নেই। এছাড়া মন্ত্রণালয় অথবা উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করলে আমরা এ থেকে সরে আসবো। অন্যথায় যেকোনো মূল্যে রাষ্ট্রীয় অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হবে না বিজিবি।
জানা গেছে, বরকল বিজিবি’র সদর জোন ও ছোট হরিণা বিজিবি জোনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানীর অভিযোগ তুলে তাদেরকে প্রত্যাহর করাসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বুধবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বরকল, ছোট হরিণা, ভূষণছড়া ও কলাবুনিয়া এই চারটি বাজারে মালামাল ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্য সকল স্তরের জনগণকে বরকলবাসীর ব্যানারে আহবান জানানো হয়েছে। এছাড়াও উক্ত চারটি বাজারে যাওয়া-আসা বন্ধসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র নিকট সকল প্রকার দ্রব্য বিক্রয় ও যেকোনো ধরনের সহযোগিতা প্রদান স্থগিত রাখারও আহবান জানানো হয়েছে।
সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান