গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার চারমাস পরও দাপ্তরিক জটিলতার কারণে ব্রীজটি মেরামতে উদ্যোগ নেয়নি কোনো প্রশাসন’। দৈনিক রাঙামাটিতে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর দৈনিক রাঙামাটি সম্পাদক নিজে মন্ত্রলণালয়ে ওয়েব পেইজের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই প্রতিবেদনে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি রাঙামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষকে দ্রুততার সাথে সড়কটি মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাঙামাটি জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের ঘাগড়ার অদুরে অবস্থিত একটি বেইলী সেতু ভেঙ্গে পড়ার পর সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল একটি ভারী পণ্যবাহী ট্রাক কাপ্তাই হয়ে রাঙামাটি আসার পথে ওই বেইলী ব্রিজটির উপর উঠলে ব্রিজটি ভেঙে পড়ে।
বন্ধ হয়ে যায় সকল ধরণের পরিবহন। এতে কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা, রাজস্থলী, বাঙালহালিয়া ও বিলাইছড়ির কিছু অংশসহ জেলা সদরের সাথে প্রায় দু’লক্ষ মানুষের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রাঙামাটির সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে পড়ে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য। বিপাকে পড়ে সুইডিশ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, কর্ণফুলি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং ব্যবসায়ীরা।
অবশেষে ব্রিজটি নির্মাণ শেষ করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় ওইসব এলাকার মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তারা আশা প্রকাশ করেছে তাদের মন্দাভাব কেটে গিয়ে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
কাপ্তাই’র সবজি ব্যবসায়ী কাসেম আলী জানান, এ ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ব্যবসার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। রাঙামাটির সাথে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় এখন মনে অনেক প্রশান্তি লাগছে।
কাপ্তাই কর্ণফুলী ডিগ্রী কলেজের ছাত্র মনু মারমা জানান, রাঙামাটি সদর হতে কাপ্তাই যেতে আমার অনেক টাকা খরচ হতো এবং সময়ও লাগতো অনেক। কিন্তু ব্রিজটি চালু হওয়ায় আমার খুব ভাল লাগছে।
রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে বাস চালক ফোরকান জানান, এ বেইলী ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের পরিবহন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে আমার মালিকের অনেক লোকসান হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষ যারা প্রতিদিন কাপ্তাই-বাঙালহালিয়া, রাজস্থলী, বান্দরবান যাতায়াত করে তারাও চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বিপাকে পড়েছিল শতশত ছাত্রছাত্রী। ব্রিজটি তৈরি হওয়ায় দুর্ভোগ থেকে তারাও মুক্তি পাবে।
রাঙামাটি-বান্দরবানে যাতায়াত করা উশৈচিং মারমা বলেন, আমি এখন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছি। তিনি বলেন, যাক এবার ব্রিজটি নির্মিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিও) আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে বেইলী ব্রিজটির কাজ শেষ করেছি। আমরা খুশী যে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে সড়কটি চালু করা গেছে।
তিনি জানান, সড়ক বিভাগের ম্যান্টেইন্যান্স ফান্ড থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে জরুরী ভিত্তিতে এই বেইলী ব্রিজ নিমার্ণ করা হয়েছে।
স্মরণযোগ্য যে, রাঙামাটির সড়ক ব্যবস্থানাপনা নিয়ে ইসিবি ও সড়ক বিভাগের আন্তঃবিভাগীয় জটিলতার কারণেই মূলত ব্রীজটি মেরামতে দীর্ঘসূত্রিকার উদ্ভব ঘটে। দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় একাধিকবার আলোচনার পাশাপাশি এ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা তৎপর হওয়ায় অবশেষে ইসিবি দ্বন্দ্ব শেষ হয়েছে। গত জুলাই মাসে ইসিবি রাঙামাটির সকল সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সড়ক বিভাগের হাতে ফিরিয়ে দেয়।