জনতার উপর ইউএনওর ক্ষোভ ও ভাংচুর ভিডিও ভাইরাল

216

॥ নুরুল কবির, বান্দরবান ॥

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় একটি ফুটবল টীমের ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে খেলোয়াড় ও জনতার সামনে ট্রপি ভেঙ্গেছেন ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ। এ ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ইউএনও’র বিরুদ্ধে ফেসবুক স্টাটাস দিয়ে তার অপসারণ দাবী ও আন্দোলনের হুমকী দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম। খেলায় উপস্থিত চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, ইউএনর বক্তব্য কালে কেউ কেউ বেড সাউন্ড করায় ইউএনও ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন। এদিকে শনিবার বিকালে আলীকদমের বিতর্কিত ইউএনও’র প্রত্যাহারের দাবিতে, আলীকদমের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম। বক্তরা বলেন আগামী ২৪ঘন্টার মধ্যে আলীকদম উপজেলায় ইউএনও মেহরুবা ইসলাম প্রত্যাহারের দাবি জানান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত শুক্রবার(২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মাংতাই হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আবাসিক স্বাধীন যুব সমাজের উদ্যোগে জুনিয়র একাদশ বনাম রেপার পাড়া বাজার একাদশ ফুটবল টিমের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহরুবা ইসলাম।

সমাপনী খেলার প্রথমে ২ দলে ৩৫ মিনিটকরে ৭০ মিনিট খেলার পর ড্র হয়ে যায়। এ কারণে রেফারী দুই দলকে টাইব্রেকার খেলার সিদ্ধান্তদেয়। খেলায় ৪টা টাইব্রে কারে আবাসিক জুনিয়ার দলের ৩টা গোল হয় এবং টাইব্রেকারে রেপার পাড়া একাদশের একটা গোল হয়। খেলার নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক জুনিয়র একাদশ চ্যাম্পিয়ন এবং রেপার পাড়া একাদশ রানার্স আপ হয়।

এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহরুবা ইসলাম বলেন, খেলায় হার জিত থাকবে। এতে কারো মন খারাপের কারণ নেই। তিনি উপস্থিত জনসাধারণের কাছে খেলার ফলা ফলে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে কয়েক জন খেলার‘ ফলাফল মানি না’বলাতে ইউএনও ক্ষিপ্ত হন। এর পর তিনি খেলার চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপকাপ (ট্রফি) ভেঙে ফেলেন! এ সংক্রান্ত ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওইউএনও-কেট্রপিউপরেতুলে টেবিলে আছাড় মারতে দেখা যায়।

গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়। উঠে সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তার ফেসবুক আইডিতে ইউএনওকে প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং আন্দোলন করার হুমকী দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেরুবা ইসলাম জানান, খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণের সময় হঠাৎ একজন এসে বললেন যে, তিন গোল চার গোল তারা মানে না। তখন আমি বললাম, খেলা আবার হবে কিনা। তখন এটা নিয়ে পেছন থেকে খুব আওয়াজ শুরু হলো। কয়েক জন বল লো তারা ট্রফি নেবে না, এট্রফি যত দিন থাকবে একটা আক্রোশ থাকবে। তারা বলল, ট্রফি ভেঙে ফেলা হোক। পরে আমি বললাম, তা হলে ঠিক আছে আপনারা মেডেল গুলো নিয়ে যান। ইউএনও মেহেরুবা ইসলাম আরো বলেন, তারা সেগুলোও না নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওরাই বলছে ট্রফিটা ভেঙে ফেলা হোক। তাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওখানে বহিরাগত কিছ ুছেলে এসে ছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যানরাও তাদেরকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে শনিবাবার সকাল দশটায় চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি এ খেলায় উপস্থিত ছিলাম। ইউএনও’র বক্তব্যকালে কেউ কেউ ‘বেড সাউন্ড’ দেয়। বলে যে, আবারো খেলতে হবে। এতে সাময়িক উত্তেজনা হয়। তিনি বলেন, টমটমচালক আব্দুররশিদের ছেলে এবং বাজার পাড়ার একাদশের পরে

আলীকদম স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক ইসমাইল হাসান বলেন – আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুবা ইসলাম যে কাজটি করেছেন একজন সুস্থ মানুষ এ কাজ করতে পারে না! জাতি এ-ই আচরণ আশা করে নাই! যেহেতু আপনি একজন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি! এ-ই ছোট ছোট ছেলেদের মনে আঘাত দিয়েছেন তিনি! ওনি কেমন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা! যাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে সেই পুরস্কার গুলো ভেঙে দিয়েছেন! বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচিত অতি তাড়াতাড়ি ওনাকে প্রত্যাহার করা।

জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এ রকম আচরণ করার কথা নয়। বিতর্ক থাকলে ট্রফি না ভেঙে নিজের হেফাজতে রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারতেন। তবে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।