॥ আনোয়ার আল হক ॥
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জনসংযোগ আর সমর্থকদের প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে রাঙামাটির বৃহত্তর উপজেলা বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন। এই পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা সীমিত হওয়াসহ জনবসতি কম হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রার্থীরা সকল এলাকায় প্রথম রাউন্ডের প্রচারণা শেষ করে ফেলেছেন। এখন চলছে বাছাইকৃত লোকজনকে আস্থায় আনার কসরত।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এ উপজেলার পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাঙামাটি জেলা শহরের বাইরে এটিই একমাত্র পৌরসভা । এই পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্থানীয় সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মেয়র পদে প্রার্থী তিনজন থাকলেও দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যেই লড়াই হওয়ার সম্ববনা বেশি। কারণ এবারই প্রথম এই পৌরসভার মানুষ মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে রায় দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কাজেই দলীয় প্রতীকের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই তাদের ঝোঁক একটু বেশিই থাকবে বলে মনে করছেন উভয় দলের নির্বাচন পরিচালনাকারীরা।
কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী যিনি আছেন তাকেও হিসাবের বাইরে রাখা যাচ্ছে না, কারণ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং পুরাতন আওয়ামী লীগের নেতা। তবে দলের সাথে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন থাকায় দলীয় ভোট ব্যাংকে তার তেমন কোনো প্রভাব থাকবে না বলে মত প্রকাশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে নির্বাচনী ডামাডোলের সূচনায় দুই বড়দলে কোন্দলের আভাষ পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীরা সকলেই নিজ নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় উভয় দলেই প্রকাশ্যে কোনো কোন্দাল নেই। অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই প্রচারনা চালাচ্ছেন বড় দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা। কারণ গত ২৭ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সুজিত চাকমা এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সেলিম উদ্দিন বাহারী মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। একক প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে উভয় দলের জেলা নেতৃবৃন্দ সফল হয়েছেন।
বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন, আ’লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জাফর আলী খাঁন, বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মোঃ ওমর আলী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সমাজসেবক আজিজুর রহমান আজিজ; তিনি সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা।
নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য লড়ছেন ৬জন। এরা প্রায় সকলেই দলীয় আস্থায় রয়েছেন।
ইতোমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহর করলেও বিএনপির সেলিম বাহারী এখনও তার দলের প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় মাঠে নামেননি বলে জানিয়েছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সকলেই নৌকার জন্য মাঠে সরব রয়েছেন। দাদা দীপংকরের নির্দেশের বাইরে তারা কেউ এদিক সেদিক করার সাহস পায়নি। এই দৃষ্টিকোন থেকে প্রচারণায় আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে বর্তমান মেয়র আলমগীর পরিচয়ে বিএনপির লোক হলেও নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা হওয়ার পর তাকে এ পর্যন্ত আর এলাকায় দেখা যায়নি।
এই পৌরসভায় পাহাড়ি ভোটার রয়েছে প্রায় ১৬শ’। পাহাড়ি ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন ওয়াকিবহাল মহল। কারণ অতীতে বহুবার পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলোর মতিগতির উপর ভোটের হিসাব নিকাশ রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যেতে দেখা গেছে।
বাঘাইছড়ি পৌর নির্বাচনে কোনো আঞ্চলিক দলই প্রকাশ্যে মাঠে না থাকলেও তাদের নিজ নিজ ভোটের তহবিল গাঁটে বেঁধে চুপ করে বসে আছেন তারা। পৌর এলাকায় ইউপিডিএফএর তেমন কোনো প্রভাব নেই। এখানে জেএসএস এবং সংস্কারপন্থী জেএসএসই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। দলীয়ভাবে জেএসএস আওয়ামী লীগ বিরোধী তাই তাদের ভোট নৌকার বিপক্ষে থাকবে এটা অনেকটা নিশ্চিত।
দলীয় সূত্র জানাচ্ছে শেষ মূহুর্তে হাই কমান্ডের কোনো নির্দেশনা না গেলে পাহাড়ি সুশীল সমাজের ভোটের একটি বিশাল অংশ জাফর আলী খানের ঝুলিতে জমা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থী বেশ সুবিধা জনক অবস্থায় রয়েছেন। কারণ সংস্কারপন্থীরা তার পক্ষেই মৌন সমর্থন জানিয়েছেন।
পক্ষান্তরে ভোটের আগের রাতে যদি দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশ যায় যেটা অতীতে বহুবার দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে তাদের ভোট কোনো পক্ষে একচেটিয়াভাবে গণনায় আসবে। তখন এই ভোটগুলোই হবে ফলাফলের নির্ণায়ক।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুছা মাতব্বর বলেন, বাঘাইছড়ি পৌর নির্বাচনে আ’লীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই কোনো কোন্দলও নেই। জেলা ও উপজেলা আ’লীগের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীর জন্য পরিশ্রম করছেন কাজেই আমরা জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী।
তিনি বলেন, যাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আ’লীগের পরিক্ষিত নেতা বিষয়টি এখন সকল নেতাকর্মীর মধ্যে বদ্ধমূল হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি হাজি মোঃ শাহ আলম বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে মেয়র পদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোঃ ওমর আলী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। কারণ এই পৌরসভার মানুষ বিএনপির সাথে সবসময় ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে।
তবে ফলাফল কি হবে এখনি আঁচ করা না গেলেও নির্বাচনী মাঠ এখন প্রচার প্রচারণায় সরগরম উভয় প্রার্থীদের প্রচারণায়। মানুষের মাঝে নির্বাচন নিয়ে ব্যপক উৎসাহ রয়েছে। এই পৌরসভায় এবার কিছু নতুন ভোটার ও বেশ কিছু নারী ভোটার রয়েছে তাদের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে বেশ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।
গত ৮ জানুয়ারি জেলার বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন(ইসি)। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটানিং অফিসার এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সহকারী রিটানিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা রিটানিং অফিসার মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো ধরণের বেআইনী তৎপরতা সহ্য করা হবে না। এই পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ১৮৪। বাঘাইছড়ি পৌরসভাটি গঠিত হয় ২০০৪ সালে। তবে প্রশাসক দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের শেষের দিকে।
জেলা আ’লীগ সদস্য ও উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আ’লীগ প্রার্থী মোঃ জাফর আলী খাঁন বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে আ’লীগের রাজনীতি করে আসছি। দল ক্ষমতায় থাকায় আমি নির্বাচনে জিতলে এই অবহেলিত পৌরসভার উন্নয়ন করা সহজ হবে। তিনি বলেন দলের সবাই আমার সাথে যেভাবে কাজ করছে আমি জেতার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ ওমর আলী বলেন, এলাকার সকল বয়সের মানুষের সাথে আমার একটি অলিখিত বন্ধন রয়েছে। সবাই আমাকে পছন্দ করে, সুখে দুখে পাশে চায় এবং পায়। তারা আমার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দলের মধ্যে যারা বিরোধিতা করেছিল তারাও এখন আমার সাথে কাজ করছে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো ।