জাতীয় প্রেস ক্লাবে গোল টেবিল আলোচনা : শিল্প গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব নেই

508

DSC_0452 chinta

 

ঢাকা ব্যুরো অফিস, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি) : স্বেচ্ছাসেবী গবেষণা সংগঠন ‘চিন্তার চাষ’ এর আয়োজনে আজ ৩০ জানুয়ারি ২০১৬, শনিবার সকাল ১০টা হতে দুপুর ০১টা পর্যন্তজাতীয় প্রেস ক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে ‘শিল্প গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব¡: বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প প্রতিষ্ঠান যৌথ গবেষণা” শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বেশির ভাগ গবেষকরা তাদেও বক্তব্যে বরেনে, ‘শিল্প গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন কর্র্তৃত্ব নেই। গবেষকদের অনেকটা নিজ উদ্যোগেই গবেষণর কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ’র পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. আই. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. এম. আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান ও অধ্যাপক ড. জেবা আই সেরাজ, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) এর পরিচালক (গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ) বাবুল চন্দ্র রায়, আয়োজক সংগঠন ‘চিন্তার চাষ’র চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এবং ভাইসচেয়ারম্যান এম জাকির হোসেন খানসহ দেশের বিভিন্ন গবেষক, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথ গবেষণার বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযেগী ও প্রয়োজনীয় বিষয়। শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহের অবশ্যই গবেষণা ও উন্নয়নে (আর এন্ড ডি) গুরুত্ব প্রদান করা উচিৎ। অনেকে প্রযুক্তি স্থানান্তরের কথা বলে বহুজাতিক কোম্পানিসমূহকে ডেকে নিয়ে আসে। তিনি ব্যাংকসমূহকে সিএসআর হতে গবেষণায় ব্যয় করার আহ্বান করেন। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে গবেষণায় আরও বেমি মনোযোগী হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

মূল প্রবন্ধে ড. শফিক উজ জামান  মাঠপর্যায়ের জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি তুলে ধরে বলেন, দেশের প্রতিষ্ঠিত ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিভাগ, ইনস্টিটিউটে যৌথ গবেষণা থাকা সম্ভব এরূপ ১২৭টি বিভাগ, ইনস্টিটিউটে জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপকৃত মোট ১২৭টি বিভাগ, ইনস্টিটিউটের মধ্যে মাত্র ২৭টি (২১.২৬%) বিভাগ, ইনস্টিটউটে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ গবেষণা রয়েছে। ১০৭টি বিভাগ, ইনস্টিটিউট (৮৪.২৫%) বলেছে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ গবেষণায় সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া জরিপকৃত মোট ১২৭টি বিভাগ, ইনস্টিটিউটে গবেষণা করছেন এরূপ শিক্ষক রয়েছেন ২৫৬৩ জন যাদের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ গবষণায় যুক্ত আছেন মাত্র ১৮৩ জন (৭.১৪%)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বা গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বা পণ্য থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ীক সুবিধা পেলে শেষোক্ত প্রতিষ্ঠান শুধু আগ্রহী হবে না স্বেচ্ছায় যৌথ গবেষণায় এগিয়ে আসবে। উদ্ভাবিত পণ্য বা মেধা থেকে ভোক্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হলে উভয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। দেশ এগিয়ে যাবে।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, বাংলদেশে যোগাযোগের অভাবই বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে যৌথ গবেষণা না হওয়ার প্রধান কারণ। বাংলাদেশী ছাত্ররা বিদেশে গবেষণায় অনেক ভালো করছে। তাদেরকে যদি দেশে নিয়ে আসা যায় তবে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন যে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে গবেষণার মান কমে এসেছে।

ড. এ. আই. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদেও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ উপনিবেশিক শাসনের প্রেক্ষাপটে তৈরি। এগুলো শিল্প যুগের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হয়নি। আমরা এখনও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি।

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, গবেষণার অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। মুনাফা দ্বারা অগ্রাধিকার ঠিক করলে হবেনা। এটা নির্ধারণ করতে হবে মানব কল্যাণ দ্বারা। দুই ধরণের শিল্প রয়েছে। এক ধরণের শিল্প হচ্ছে রুগ্ন শিল্প যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যুক্ত অপরটি হচ্ছে ধনী শিল্প। কোন ধরণের গবেষণা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের শিল্প চাহিদা হতে।

ড. হাসিনা খান বলেছেন, আমাদের দেশে গবেষণার মূল্যায়ন নেই। গবেষণার প্রয়োজনে যেসব রিএজেন্ট আমদানি করা হয় সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘসূত্রিতা লেগে যায়। দেশের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের গবেষকদের সমন্বিতভাবে কাজ করার কোন মানসিকতা নেই।

ড. জেবা আই সেরাজ বলেন, গবেষণায় আমাদেরও অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কথা বলার চর্চা থাকা প্রয়োজন। আমাদেরও দেশে গবেষণার সংস্কৃতি নেই। একটি কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে সকল ধরণের গবেষণার সমন্বয় সাধনের জন্য।

এুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, গবেষণার মতো মৌলিক বিষয়টি এখনও দেশে যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। তিনি স্বনির্ভর জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি স্কুল স্তর থেকেই গবেষণা চর্চার উপর উগুত্বারোপ করেন।

বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে বিজেএমসি যে দামে পাট বিক্রি করছে উৎপাদন খরচ তার চেয়ে বেশি। পাট শিল্পকে লাভজনক করতে হলে পণ্যের বহুমুখী করণের প্রয়োজন আর এর জন্য গবেষণার কোন বিকল্প নেই। গবেষণা ছাড়া উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।

এম জাকির হোসেন খান বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে উন্নয়নমূলক কাক আমরা নিজ অর্থায়নে করছি কিনা তার চেয়ে নিজ প্রযুক্তিতে করছি কিনা সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি গবেষণা সমন্বয়ের জন্য ফোকাস গ্রুপ তৈরি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সিএসআর এর ১% গবেষণায় ব্যয় করা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান