॥ আলমগীর মানিক ॥ ‘জুম্ম সংস্কৃতি বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হোন’ শ্লোগান নিয়ে রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে বিজু উৎসব উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা। উৎসব ঘিরে রোববার সকাল ১০টায় পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণসমাবেশে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের ২৯৯নং রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে বিজু সাংগ্রাই বিষু বিহু সাংক্রোন উদযাপন কমিটি-২০১৬ আহবায়ক অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী ও শোভাযাত্রা সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী, রাঙামাটি সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিতা চাকমা বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সমন্বয়কারী বিজয় কেতন চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন শরৎ জ্যোতি চাকমা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্বোধনী নৃত্য-সঙ্গীত পরিবেশন করেন পাহাড়ি শিল্পীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ঐতিহ্যবাহী আমাদের এই উৎসবটি যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে আনন্দ করার জন্য। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর নানা ষড়যন্ত্রের কারণে আজকে এই উৎসব পালন করতে হচ্ছে ক্ষোভ, হতাশা ও প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় জুম্ম সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে। জুম্ম জনগণ আজও অধিকারহারা। পার্বত্য চুক্তিতে জুম্ম জনগণের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনগণ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও অবাস্তবায়িত। তিনি অবিলম্বে সরকারকে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান এবং জুম্ম জনগণকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহবান জানান।
এমপি ঊষাতন তালুকদার আরও বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণ নিরানন্দ পরিস্থিতির মাঝে স্রেফ সামাজিক রীতি পালনে বিজু উৎসবটি পালন করতে বাধ্য হচ্ছে। উৎসবে আনন্দ করার কোনো পরিবেশ নেই পাহাড়ে। আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। আমরা আজ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তহীনতায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শাসকগোষ্ঠী আঞ্চলিক ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে আজও শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন হস্তান্তর করেনি। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে কাগুজে বাঘ করে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শহরে বের করা হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি পৌরসভা প্রাঙ্গঁণ হতে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি স্টেডিয়াম গিয়ে শেষ হয়। বিকালে রাঙামাটি স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। এছাড়া আজ সোমবার বিকাল ৫টায় রাঙামাটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কাল ১২ এপ্রিল সমাপনীর দিন ভোর ৬টায় শহরের রাজবন বিহার পূর্ব ঘাটে আনুষ্ঠানিক ফুল ভাসনো ও বিকাল ৩টায় রাঙামাটি স্টেডিয়ামে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ঘরে ঘরে বিজুর মূল উৎসব পালিত হবে ১২-১৪ এপ্রিল। এছাড়া ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলোৎসব।