জুরাছড়ির আবাদী জমিগুলো তামাকের ছোঁবলে ভোঁতা হয়ে পড়ছে

388

॥ এম নাজিম উদ্দিন ॥

রাঙামাটি জুরাছড়ি উপজেলাতে উর্বর আবাদি জমির উপর অবাধে চলছে তামাক চাষ। অপরদিকে,তামাক চুল্লিতে পুরাতে পাহাড়ে নির্বিচারে চলছে প্রাকৃতিক বনের গাছ-পালা কাটার হিরিক। নির্বিচারে গাছ-পালা কাটায় প্রাকৃতিক বনের উপর বিরূপ পড়ছে। এছাড়া তামাক চাষে ফসলী জমির উর্বরাশক্তি চুষে খাচ্ছে। জমিতে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার কীটনাশক ও জ্বালানি কাঠ ব্যবহারে জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়ছে। প্রতি বছর এ উপজেলায় তামাক চাষ বেড়ে রবি ফসল চাষ জমি গুলো দখল করছে বলে দাবী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।

দেখা গেছে জুরাছড়ি ইউনিয়নের ঘিলাতলী ও শীলছড়ি,মৈদং ইউনিয়নের বারাবান্যা,হাজাছড়ি, জামেরছড়ি,ফকিরাছড়ি ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে বস্তিপাড়া ও বরকলক এলাকায় তামাকের বীজ তলা করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় আবাদি জমিতে তামাক চারা রোপন করা হচ্ছে। আবার কোথাও তামাকের পাতা গজিয়ে সবুজ হয়েছে বিল। তামাক চুল্লিতে পুরানোর জন্য অনেক জঙ্গলে কিংবা রাস্তার পাশে কাঠ কেটে স্তপ করে রাখা হয়েছে। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে চুল্লিতে তামাক শুকানো হয়। চুল্øি তৈরীতে কেউ কেউ ব্যস্ত দেখা যায়।

শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার পাশে তামাক চাষ করা হয়েছে। প্রতিবছর তামাক পরিপক্ব হলে গন্ধে স্তব্ধ হয়ে পরে ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান। শীলছড়ি ক্যাম্পের পূর্বে ২০ গজ দুরে প্রতিবছর চুল্লি স্থাপন করা হয়। জনসমাগম চলাচল পথে বাজারজাত করণ করা হয়। প্রশাসন এতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় সুশীর ছাত্র সমাজের।

মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন,তামাক কোম্পানি কম শর্তে ও কম সুদে ঋন প্রদান এবং প্রত্যক্ষ ভাবে কারিগরি সহায়তা প্রদানের কারণে চাষীরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, রবি ফসর চাষাবাদে সার কীটনাশকের অভাব ও উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করার অসুবিধার কারণে তামাক চাষ বাড়ছে।

মৈদং ইউনিয়নের মদন চন্দ্র চাকমা বলেন,মৌসুম শাকসবজি চাষ করলে যেখানে সার আর কীটনাশকের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়-সেখানে তামাক চাষে এসব না চাইতে এসে যায়। এছাড়া মৌসুম শাকসবজি বাজারজাত করণ ও যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় লোকসান গুণতে হয়।

ঘিলাতলীর রিটন চাকমা বলেন,গেল বছর তামাক চাষে ভাল দাম পাইনি। তাতে ঋনের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋন কমাতে এবছর আবার তামাক চাষ করছি।

বারাবান্যা শ্যামলী চাকমা,জামেরছড়ির কল্প চাকমা,বলেন, তামাক চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কোম্পানি থেকে অগ্রিম ঋন পাওয়া যায়। তাঁরা জানান এক হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করে উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে ২/৩ লক্ষ টাকা আয় হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.অনন্যা চাকমা বলেন,তামাকের গন্ধে তৎক্ষনিক ভাবে রোগ দেখা না দিলেও পরবর্তীতে শিশু ও গর্ভবতী মাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এতে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।

এদিকে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে তামাক চাষের ব্যাপরে নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে তিনটি ইউনিয়নে চাষি ও তামাক কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুরাছড়িতে ৫শ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় এক হাজার দুই শত ষাইট হেক্টরের বেশি জমিতে রবি ফসলের চাষ হয়। কিন্তু তামাক চাষের প্রভাবে এর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তামাক চাষ বন্ধ না হলে রবি ফসল চাষের পরিমাণ কমতে থাকবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.মাহফুজুল আহম্মেদ সরকার বলেন,তামাক চাষ বন্ধে কৃষি বিভাগ, বাদাম, ডাল, শরিষা, ভুট্টা ও উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ হতদরিদ্র কৃষকদের বিনা মূলে প্রর্দশনী প্রদান করা হচ্ছে। তামাক বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে প্রচার অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। এছাড়াও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গুলো সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।