টানা তিনদিনের ছুটিতে প্রকৃতির রাণী রাঙামাটিতে পর্যটকের ঢল

525

॥ মিল্টন বাহাদুর ॥
টানা তিন দিনের সরকারী ছুটিতে রাঙামাটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। শীতের শেষদিকে অবকাশ কাটাতে প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের লীলাভূমি পাহাড়ি পর্যটন শহর রাঙামাটিতে সমাগম ঘটেছে পর্যটকের। পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। হোটেল মোটেল ছাড়াও শহরের পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসাও এখন জমজমাট।

সরজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ ১০ মাসের অধিক সময় ধরে করোনা মহামারীর কারণে ঘরবন্দি জীবন কাটিয়ে ইটপাথরের শহর ও যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ দলে দলে ছুটে আসছেন প্রকৃতি কোলে; পাহাড় আর হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বেষ্টিত রাঙামাটিই তাদের প্রথম পছন্দ। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পর্যটনের আকর্ষনীয় ঝুলন্ত সেতু ছাড়াও রাঙ্গামাটিতে পর্যটনের আকর্যনীয় স্পটের মধ্যে শুভলং ঝর্ণা, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠিদের যাদুঘর, ডিসি বাংলো পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই লেক, পেদাটিংটিং, টুকটুক ইকো ভিলেজসহ কাপ্তাই লেকের পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।

এছাড়া রাঙ্গামাটি শহরে সেনাবাহিনী পরিচালিত আরণ্যক হলিডে রিসোর্টে দৃষ্টিনন্দন ওয়াটার পার্ক ‘হ্যাপী আইল্যান্ড’ রয়েছে। তবে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই। ১৯৮৫ সালে দুই পাহাড়ের মাঝখানে তৈরি করা হয় এই আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটি। তাই পর্যটকেরা এসে প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। বছরে আনুমানিক প্রায় দুই লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন।

আর পর্যটকদের আনাগোনায় পর্যটন স্পটগুলোতে মৌসুমি ফলের ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসাও জমে উঠেছে। ফলে করোনার ভাইরাসের কারণে প্রাণহীন এলাকাগুলোতে সাময়িকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটির অর্থনীতিও। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খুশি হলেও পর্যটন স্পটগুলোর সংস্কার ও যুগোপযোগী না হওয়ায় অনেক পর্যটকই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে খুব শিগগির সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে, পর্যটনখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বানিজ্যে অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। তবে আস্তে আস্তে আবারও আগের চেহারায় ফিরছে পর্যটনখাত। এমন পর্যটক সমাগম থাকলে করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পর্যটক যান্ত্রিক শহুরে ক্লান্তি দূর করতে ছুটে আসেন রাঙ্গামাটি। বিনোদনের খোঁজে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের আনন্দ আর উচ্ছলতা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিচ্ছে জীবনের নানান জটিলতা। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় থাকে এই পর্যটন শহরে।

রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, তিন দিনের টানা ছুড়িতে এখানে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। এছাড়ও ছুটির দিনেও পর্যটকের ভীড় লেগেই থাকে। শীত মৌসুমের শেষ দিকে ভালো সারা পাচ্ছি আমরা। আগে থেকেই বুকিং হয়ে থাকায় প্রতিটি হোটেল-মোটেল পরিপূর্ণ পর্যটকে।
এব্যাপারে পর্যটন টুরিষ্ট বোট-মালিকর সমিতি সহ সভাপতি মোঃ রমজান আলী জানান, দীর্ঘদিন করোনা ভাইরাসের পর এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি কারণে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের আগমন বাড়াতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভাল যাচ্ছে বলে জানান বোট মালিক সমিতির নেতা।

রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে রাঙ্গামাটির সরকারী পর্যটন মোটেলের শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। শহরের অন্যান্য আবাসিক হোটেলও একই অবস্থা। আর করোনার কারণে পর্যটকদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার সব রকম ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আর পর্যটন স্পটগুলো আরো বেশী আকর্ষনীয় করতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের জন্য এসব পর্যটন স্পটগুলো সংস্কার করে আরো বেশী যুগোপযোগী করা গেলে পার্বত্য রাঙ্গামাটি পর্যটন শিল্পের বিকালে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।