ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু; কুটনৈতিক প্রচেষ্টাই পারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে

373

 

স্টাফ রিপোর্ট- ৭ অক্টোবর ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি): মায়ানমার সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। ভারতের মত মায়ানমার আমাদের প্রতিবেশি বন্ধু রাষ্ট্র।  মায়ানমার তাদের অভ্যন্তরিন সমস্যা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু মায়ানমার বাংলাদেশ আক্রমন করেনি, আমরাও মায়ানমার আক্রমন করিনি। কিন্তু তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে, গণ হত্যা চালিয়েছে এবং অত্যাচার করেছে যার ফলে রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন ধৈর্য ধরে মুন্সিয়ানার সাথে এ সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা মানবিকভাবে বিবেচনা করা জরুরী। এনিয়ে রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকা উচিত। গত মঙ্গলবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও এটিএন বাংলার যৌথ আয়োজনে রাজধানীর এফডিসিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাত্রা আছে। এর সমাধান কি, সামরিক পথে সমাধান হবে, নাকি রাজনৈতিক নাকি কুটনৈতিক পথে সমাধান হবে? এই সমস্যা তুলে ধরতে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যম। এই সংকটে বাংলাদেশ কোন আন্তর্জাতিক সাহায্য না চেয়ে একাই মোকাবেলার চেষ্টা করেছে। তবে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো নানা রকম রাজনৈতিক, কুটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার মনে করে ১৬ কোটি মানুষ খেতে পারলে, তারাও খেতে পারবে। জাতিসংঘের ভূমিকা, শেখ হাসিনার উদ্যোগ এবং কুটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টকে ভিত্তি করে সমাধান বের করতে হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, প্রত্যেককে গুনে গুনে ফেরত নিতে হবে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ মায়ানমার এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের মাধ্যমেই এর স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব। ভারত, চীন, রাশিয়া রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পক্ষে নয়, তবু তারা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এ সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করার কথা বলেছে। দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের পাশাপাশি ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ দরকার এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য। মন্ত্রী আরো বলেন, অং সান সুচি যে তার ভাষনে স্বীকার করেছে, মায়ানমারের নাগরিকরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে এসেছে এটিও আমাদের কুটনৈতিক তৎপরতারই বিজয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমরা এর দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য অবরোধসহ এই হত্যাযজ্ঞের জন্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমারের সেনাদের বিচারের জন্যে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরালো করতে হবে। তিনি বলেন অতিদ্রুত আমাদের সরকারকে রাশিয়া, চীন ও ভারতের সাথে সফল কূটনৈতিক তৎপরতার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দলমত পার্থক্য ভুলে সকল অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, দেশে-বিদেশে অবস্থান করা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গা সংকট মোকবেলায় কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যায় বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যে চাপ পড়ছে তা মোকাবিলায় এখনই একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তা সারা বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে।

প্রতিযোগিতায় বিজেএমই ইউনিভার্সিটি অফ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি প্রাইম ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। বিচারক ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কুটনৈতিক সম্পাদক সাংবাদিক মাঈনুল আলম, অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস ও সিনিয়র কুটনৈতিক সাংবাদিক আঙ্গুর নাহার মন্টি।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।