॥ ইকবাল হোসেন ॥
নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রায় ২মাস ধরে অচল বাংলাদেশ। রাঙামাটি পার্বত্য জেলায়ও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। অঘোষিত লকডাউনের ফলে কর্মহীন হয়ে ঘরবন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে রাঙামাটি জেলা থেকে ২০১১ সালে এসএসসি পরিক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত (টিম ইলেভেল) এর প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের হাতে করোনা তহবিলের জন্য ব্যাচ-২০১১ এর নামের সাথে মিল রেখে ৫০হাজার ১১টাকা তুলে দিয়েছে। এর পাশাপাশি তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাঙামাটিতে পিসিআর ল্যাব এবং রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। রবিবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে টিম ইলেভেন এর এক প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের হাতে উক্ত অর্থ তুলে দেয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বিশাল চৌধুরী সানি, শাহ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. ইকবাল হোসেন এবং লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের মো. সজিব।
এদিকে টিম ইলেভেন এর এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। তিনি ত্রাণ তহবিলে এই অর্থ সহায়তা জমা দেয়ায় ২০১১ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি এই অর্থ অসহায়দের সহায়তায় ব্যয় করা হবে বলেও জানান তিনি।
টিম ইলেভেন এর পক্ষ থেকে অর্থ জমা দিতে আসা প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা ২০১১ সালের সকল এসএসসি পরিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হাতে করোনা তহবিলের জন্য ৫০হাজার ১১টাকা তুলে দিয়েছি। এর পাশাপাশি আমাদের ব্যাচ এর পক্ষ থেকে রাঙামাটিতে পিসিআর ল্যাব এবং রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের দাবি সংবলিত প্লে কার্ড জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের এই দাবি উপস্থাপন করেছি।
২০১১ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থীদের নিয়ে টিম ইলেভেন গঠন ও সবার সহযোগিতার মাধ্যমে ডিসির করোনা তহবিলে অর্থ সহায়তা জমা দেয়ার পেছনে মূল উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম মজুমদার জানান, করোনা দূর্যোগের ফলে কর্মিহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা যারা রাঙামাটি জেলা শহরের বিভিন্ন স্কুল থেকে ২০১১ সালে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছি সকলে একত্রিত হয়ে কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজন বন্ধুর সাথে প্রথমে আলাপ আলোচনা করি। তারপর অন্যান্য স্কুলের বন্ধু বান্ধবীদের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করার পর ফেসবুকে “টিম ইলেভেন” নামে একটি গ্রুপ খুলি। এরপর সবাই যার যার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা ২০১১ সালের পরিক্ষার্থীদের গ্রুপে এড করতে থাকে। যখন কমবেশি সব স্কুলের বন্ধুদের গ্রুপে এড করা সম্পন্ন হয় তখন আমরা সবাই যার যার সাধ্যমতো অর্থ সহায়তা করে ডিসির করোনা তহবিলে অর্থ সহায়তা জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর প্রত্যেকটি স্কুলের ২০১১ সালের পরিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ ও অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়। স্কুলের প্রতিনিধিদের নিরলস পরিশ্রম ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বন্ধুদের সহায়তায় আমরা আজ ডিসির করোনা তহবিলে ৫০ হাজার ১১টাকা অর্থ সহায়তা জমা দিতে সক্ষম হয়েছি। তাই আমি স্কুলের প্রতিনিধি ও যারা সহায়তা করেছেন সকল বন্ধুদের অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অপরদিকে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ ও অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, যেহেতু প্রায় ১০ বছর হচ্ছে আমরা এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছি। তাই আমাদের অনেকেই বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করছে। তাই যারা আমাদের সাথে ফেসবুকে যুক্ত আছে তাদের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করেছি। যাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহে ছিলো তাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেছি। আমাদের বন্ধু বান্ধবীরা দেশের যে স্থানেই থাকুক না কেন তারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যে যার যারভ সাধ্যমতো অর্থ সহযোগিতা করেছে। আর সকলের সহযোগিতা নিয়েই আমরা ৫০ হাজার ১১টাকা ডিসি স্যারের মাধ্যমে করোনা তহবিলে জমা দিতে পেরেছি।
উল্লেখ্য- বিভিন্ন স্কুলের প্রতিনিধি হিসেবে যারা দায়িত্বপালন করেছে তারা হলোঃ রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়- শরীফুল ইসলাম সবুজ, বিশাল চৌধুরী সানি। রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-পারমিতা দাশ এবং সোনালী চাকমা। শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়- মো. ইকবাল হোসেন। লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ- মো. সজীব। মুজাদ্দেদ-ই- আলফেসানী একাডেমী- হাবিব বিন শিহাদ।