॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
সড়ক দূর্ঘটনায় শাররীকভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হলেও বাস মালিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন কোন সহযোগীতা পায়নি মহিউদ্দিন মুন্না। অর্থের অভাবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মুন্না’র চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। দূর্ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ ৪৯ দিন তরল খাবার খেয়েই দিন চলছে। বাস মালিক কর্তৃপক্ষ এবং অনান্যদের কাছ থেকে সাহায্য না পাওয়ায় চিকিৎসার অভাবে শাররীক সক্ষমতা হারাতে বসেছে মুন্না। তাই তার ‘মা’ বাস মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবিসহ প্রশাসন ও গনমাধ্যমের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
মুন্না জানায়, শহরের ফিসারী ঘাট সংলগ্ন শান্তি নগর এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজ শেষে বন্ধু রবিউল এর মোটরসাইকেলে বসে রিজার্ভ বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলেন মোঃ মহিউদ্দিন মুন্না (২২)। কিন্তু পথিমধ্যেই বাঁধ সংলগ্ন মগদ্বশ্বরী মায়ের মন্দীর (সেবাখোলা)’র মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা রবি এক্সপ্রেস সেন্টমার্টিন হুন্দাই (ঢাকা মেট্রো-ব-১২-০২০০) বাসের চালক ধাক্কা দেয় এতে তাদের মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় পতিত হয়। বাসের ধাক্কায় মোটর সাইকেল সহ দুই বন্ধু রাস্তা থেকে ছিটকে লেকের ধারে গিয়ে পড়ে এতে উভয়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মহিউদ্দিন মুন্না’র দাঁত কপাটি সব ভেঙ্গে যায়, প্রচন্ড আঘাত পায় চোখেও। পরে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং অন্যান্য গাড়ির চালকরা তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। মহিউদ্দিন মুন্না’র শাররীর অবস্থার অবনতি দেখা দিলে কর্তব্যরত ডাক্তার সে দিনই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তবে রবিউল প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সে এখন মোটামুটি সুস্থ।
মহিউদ্দিন মুন্না, এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন এবং গণমাধ্যমের সহযোগীতা চান। তিনি বলেন, চলতি বছরের ১০ ফেব্রয়ারী শুক্রবার সকালে রবি এক্সপ্রেস সেন্টমার্টিন হুন্দাই (ঢাকা মেট্্েরা-ব-১২-০২০০) বাসের ধাক্কায় তাদের মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী মুন্না ও রবিউল গুরত্বর আহত হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে গুরুত্বর আহত মুন্নাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসায় মুন্নার প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মতো ব্যয় হয়। দূর্ঘটনার প্রাথমিক পর্যায়ে বাস মালিক কর্তৃপক্ষ এর রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম দফায় দফায় ২৭ (সাতাশ) হাজার টাকা দিলেও দীর্ঘদিন চিকিৎসাকালে তার কোন খোঁজ খবর কিংবা সহায়তা করেনি বাস মালিক কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে এত বড় ঘটনা ঘটে গেলেও পুলিশের কাছ থেকেও আইনী কোন সহায়তা পায়নি বলে মুন্না জানান।
মুন্না জানান, দূর্ঘটনায় মারাত্বক আহত হন তিনি। দাঁতকপাটি হাড্ডি ও উপর নীচের প্রায় সব দাঁত ভেঙ্গে সহ মুখগহ্বরে ব্যাপক আঘাত হয়। ঘটনার পর রক্ত ক্ষরণ হলে অধিকাংশ রক্ত পেটে চলে যায়। টানা পঁয়তাল্লিশ দিন চিকিৎসা শেষে অর্থের সন্ধানে এখন বাসায় এসেছি। বাবা নেই মা’ সহ ছোট ভাইকে নিয়ে জীবন যাপন নিজের আয় দিয়েই হতো এখন সব বন্ধ। মুখে তরল খাবার ছাড়া আর কিছুই খেতে পারেনা বলে জানায়। বর্তমানে তার শাররীক অবস্থায় দেখা যায়, মুন্না’র দাঁতকপাটির সবগুলোতে অনেকটা স্টীলের তারের নেট বসানো হয়েছে সাথে রয়েছে রাবার প্যাঁছানো যাতে করে বড় হা করতে না পারে। সে আরো জানায়, ডান চোখের নীচে অপারেশন করে হাড়ের জোড়া দেয়া হয়েছে লোহার প্লেট দিয়ে। দেখা যায়, চোখটির স্থানও কিছুটা নড়েছে। চোখের নীচে, দাঁতের মাড়িতে এখনো সেলাই রয়েছে। খাবার খাচ্ছে একেবারেই তরল। হাঁটাচলা করছেন খুব ধীরে।
মুন্না আরো জানান, দূর্ঘটনায় পর বাস কর্তৃপক্ষ সমস্ত দায়ভার নেবে আশ^াস দিলেও পরবর্তীতে আর কোন খোঁজখবর রাখেনি। হাসপাতালে দীর্ঘ ১মাস চিকিৎসাধীন থাকার কারণে এতদিন কিছু বলতেও পারি নাই। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকেও কোন সহায়তা তিনি পায়নি বলে জানান। আর কেউ না থাকায় বর্তমানে আইনী সহায়তা পেতে হাসপাতালের বেড থেকে উঠে আসতে হয়েছে। তাই আইনী সহায়তা পেতে বৃহস্পতিবার জেলা লিগ্যাল এইড এর কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী জজ মোঃ জুনাইদ এর সাথে সাক্ষাত করেন। সকল কাগজপত্র দেওয়ার পর তিনি এ বিষয়ে গত এপ্রিলের ২ তারিখ শুনানীর দিনও ধার্য্য করেন।
এদিকে প্রত্যক্ষদশী এবং মহিউদ্দিন মুন্নার এলাকার মানুষজন জানিয়েছেন, এত বড় ঘটনার পর বাস মালিক কর্তৃপক্ষ রবি এক্সপ্রেস সেন্টমার্টিন হুন্দাই অনেকটা গা-ঢাকা দিয়েছে। তাকে চিকিৎসার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও মালিক পক্ষ নিশ্চুপ রয়েছে। তাই গাড়ির মালিকপক্ষের নিকট আমরা তার চিকিৎসার ব্যয় সহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।